আইএমইআই (IMEI) নাম্বার কি? জেনে নিন IMEI নাম্বারের কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়।

টিআইবিঃ আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। মোবাইল বা স্মার্টফোনের আইএমইআই (IMEI) নাম্বারের সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। সাধারনত মোবাইলের প্যাকেজিং এর সাথে যে বিষয়গুলো আমাদের চোখে পড়ে তার মধ্যে IMEI নাম্বার স্টিকার অন্যতম। IMEI নম্বর সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ভালো ধারণা নেই। আজকের পোস্টটিতে আইএমইআই এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

আইএমইআই (IMEI) নাম্বার কি?

আইএমইআই(IMEI) এর পূর্নরূপ হলো International Mobile Equipment Identity। এই IMEI প্রতিটি মোবাইল ডিভাইসের জন্য একটি সংখ্যাসূচক পরিচয় বা সংখ্যাসূচক আইডিন্টিটি। প্রত্যেকটি মোবাইলে থাকে ১৫ ডিজিটের এই ইউনিক নাম্বার। তাই একটি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর অন্য মোবাইল থেকে আলাদা।

আপনার ফোনের জন্য এই আইএমইআই (IMEI) নাম্বার অতি জরুরী। তাই ফোন কেনার পরে ফোনের IMEI নাম্বারের স্টিকার ব্যাটারি ও চার্জারে লাগানোর সাথে সাথে কোথাও নোট রাখা দরকার। আপনার বিদ্যালয় বা কলেজে আপনার যেমন আলাদা আইডেন্টিটি ছিলো বা আছে, তেমনই আইএমইআই একেকটি মোবাইল বা স্মার্টফোনের ইউনিক আইডেন্টিটি। এইসব আইএমইআই (IMEI) নাম্বার থেকে ফোনের মডেল থেকে শুরু করে সিরিয়াল নাম্বার সকল কিছুই বের করা সম্ভব।

টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

IMEI নাম্বার যেভাবে গঠিত হয়?

মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছে আপনার ফোনের সব তথ্য এই আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে। সাধারনত মূল আইএমইআই নম্বরটি হয়ে থাকে ১৪ ডিজিটের। তবে পুরো আইএমইআই নম্বরটি ভেরিভাই এর জন্য এর সামনে আরো একটি সংখ্যা থাকে যা মিলে পুরো আইএমইআই নম্বরটি হয়ে যায় ১৫ ডিজিটের। তবে এখন অনেক আইএমইআই নম্বরে ডিভাইসের সফটওয়্যার ভার্সন সংস্করন এর জন্য আরেকটি সংখ্যা থাকে, যার ফলে আইএমইআই নম্বরটি হয়ে যায় ১৬ ডিজিটের। আর এসব আইএমইআই নম্বরকে IMEISV’ও বলা হয়।

২০০৪ সাল থেকে IMEI নাম্বার AA-BBBBBB-CCCCCC-D ফরম্যাটে বিন্যাস্থ হয়ে আসছে। এখানে A এবং B সেকশনকে বলা হয়ে থাকে Type Allocation Code বা TAC। আর IMEI নম্বরের এই TAC অংশ থেকে ফোনটির ম্যানুফ্যাকচারার বা তৈরিকারক এবং ফোনটির মডেল নম্বর সম্পর্কে জানা যায়।
যেমনঃ স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ এর TAC কোড হল 32-930400, গুগল নেক্সাস ৪ বা এলজি E960 এর TAC কোড হল 35-391805 ইত্যাদি। অর্থাৎ ১৫ ডিজিট বা ১৬ ডিজিটের সম্পূর্ণ IMEI নম্বরে এই TAC হয়ে থাকে ৮ ডিজিটের। এই ৮ ডিজিট এর ভেতর ২ টি ডিজিট আবারও ভেরিভাই এর জন্য। তাই মূল TAC হয়ে থাকে ৬ ডিজিটের।

এবার আসি C সেকশনের কথায়। IMEI নম্বরের ভেতরকার C সেকশনটি মোবাইল ফোনের একটি ইউনিক বা অনন্য সিরিয়াল নম্বর নির্দেশ করে। এখানে স্মার্টফোন তৈরিকারকরা একেকটি স্মার্টফোনে তাদের পছন্দমত ইউনিক নম্বর দিয়ে থাকে। আর এই D সেকশনে যে একটি নম্বর থাকে তা সম্পূর্ণ IMEI নম্বরটি ভেরিফিকেশনের জন্য। সুতরাং AA-BBBBBB-CCCCCC-D এই ফরম্যাটে আপনার স্মার্টফোনের আইএমইআই (IMEI) নম্বর গঠিত হয়।

IMEI নাম্বার দেখবেন যেভাবে?

মোবাইল থেকে আইএমইআই (IMEI) নাম্বার বের করার অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো ফোনের ডায়ালার অ্যাপ থেকে *#06# ডায়াল করলেই ফোনের আইএমইআই নম্বরটি দেখতে পারবেন।

অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের Settings> About> Phone> Status এ গিয়ে আপনি আপনার IMEI নম্বরটি দেখতে পারবেন।

অ্যাপেল বা আইফোন ব্যবহারকারীরা Settings> General> About এ গিয়ে IMEI নম্বর দেখতে পারবেন।

আপনার আপনার ফোনের বক্সে এবং ওয়ারেন্টি কার্ডেও আপনি IMEI নম্বরটি পাবেন। যাই হোক যেখান থেকেই দেখুন না কেন, অবশ্যই নম্বরটি নোট করে রাখবেন।

IMEI নাম্বার কেন প্রয়োজনীয়?

আইএমইআই নাম্বার মূলত কোনো ফোন চিহ্নিত করতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও যেকোন ফোন ট্রেস করা যায় আইএমইআই নাম্বার দিয়ে। ফোন চুরি হয়ে গেলে ফোন লক করতে বা খুঁজে পেতে এই নাম্বারটিই লাগে। আইএমইআই নাম্বার সহজেই বদলানো যায়না।

হারিয়ে যাওয়া ফোনের জন্য থানায় অভিযোগ করতে গেলে, তারাও আইএমইআই নাম্বার চাইবে এবং তা দিয়ে ফোন ট্র্যাক করে ফেলা যাবে।

যেভাবে জানবেন IMEI নম্বরটি সঠিক কি না?

রাস্তার পাশের সস্তা দামের মোবাইল থেকে শুরু করে দামী দোকানে দামী ফোনের IMEI নাম্বারের সমস্যা থাকতে পারে। অনেক জাল মোবাইল ফোন, যেমন: নকল আইফোনে IMEI নাম্বার থাকে না। আবার অনেক নকল বা জাল ফোনে খারাপ বা কারাপ্টেড IMEI নম্বর থাকে। তাই আপনার ফোন আসল কিনা বা IMEI নম্বর ভ্যালিড কিনা তা জানতে IMEI.info এর মত অনলাইনে IMEI নাম্বার চেকার ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন।

বর্তমানে অ্যাপেল, স্যামসাং, শাওমির মত মোবাইল কোম্পানির ওয়েবসাইটে তাদের ডিভাইসের IMEI ভেরিফাই করার অপশন থাকে। একটা কথা মনে রাখবেন, যে ফোনে IMEI নেই বা কারাপ্টেড IMEI এর মানে সে ফোন নকল। তাই সাধের মোবাইল কেনার IMEI চেক করে কিনবেন।

IMEI নম্বর দিয়ে মোবাইল ব্লক করবেন যেভাবে?

স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রসারের ফলে এর চুরি বা ছিনতাইয়ের হারও বেড়ে গেছে। তাই জেনে রাখুন IMEI নম্বর দিয়ে হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ব্লক করবেন যেভাবে।

১। প্রথমে আপনার ফোনের IMEI নম্বরটি জানুন।
২। এবার আপনার নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করুন।
৩। এরপর আপনি তাদের আপনার IMEI নম্বরটি বলে তা ব্লক করে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
৪। কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্লক হয়ে যাবে আপনার মোবাইল ফোন।

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন খুবই প্রচলিত একটি প্রযুক্তি পন্য। আর ধীরে ধীরে এটি আরও ফিচারফুল এবং আরো দামি হয়ে যাচ্ছে। তাই সঠিক স্মার্টফোনটি কিনতে এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে IMEI নাম্বার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবহনের জন্য যেমন VIN বা Vehicle Identification Number মোবাইলের ক্ষেত্রে তেমন IMEI নাম্বার। এটি আপনার সাধের ফোনের জন্মসনদ। স্মার্টফোন কেনার আগে IMEI নম্বরটি ভেরিফাই করে নিন এবং তার সংরক্ষন করুন।

Leave a Reply

Back to top button