ই-সিম কি? ই-সিম কিভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধা সমূহ!

টিআইবিঃ আসসালামু আলাইকুম। টেক জায়ান্ট আইফোন সবে মাত্র আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের নতুন আইফোন (iPhone XS, XS Max, XR ) পেশ করেছে। আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্স এখনও পর্যন্ত লঞ্চ করা সব আইফোনের থেকে আলাদা। এর কারণ হল এই ফোনদুটিতে গ্রাহকরা প্রথমবার পাবেন ডুয়েল সিমের সুবিধা। এখন আইফোন ইউজাররাও আইফোনে একসাথে দুটি সিম ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু এর থেকেও বড় কথা এতে একটি ফিজিক্যাল সিম থাকবেও অপরটি ই-সিম থাকবে। দুটি সিমের দুটি আলাদা নম্বর থাকবে। যেখানে ইউজার দুটি সম্পূর্ণ আলাদা কানেকশন পাবেন।
কোম্পানি জানিয়েছে যেহেতু চীনে ই-সিম ব্যবহারের কোনো উপায় নেই তাই সেখানে আইফোন এক্সএস ও ম্যাক্সের ডুয়েল সিম স্লট যুক্ত মডেল যাবে, তবে ভারতসহ অন্যান্য দেশে ফোনটির ই-সিমযুক্ত মডেলই পাঠানো হবে। তাই প্রশ্ন করা স্বাভাবিক যে ই-সিম কি এবং এর ব্যবহার কিভাবে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সে একসাথে দুটি সিম বিশেষ করে ই-সিম কিভাবে কাজ করবে।
ই-সিম কি?
ই-সিম হল এমবেডেড-সাবসক্রাইবার আইডেনটিটি মডিউল। ই-সিম হল একটি ডিজিটালি ইমবেডেড সিম কার্ড। এটি কোন ফিজিক্যাল সিমকার্ড নয়, এই সেকেণ্ডারি সিমটির জন্য আলাদা করে থাকছে না কোন স্লট। শুধুমাত্র আইফোনে নয়, বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে এই ই-সিমটি।
ই-সিম আকারে যে কোনো সাধারণ সিম কার্ডের চেয়ে দশ গুণ ছোট। এই সিম অন্য সিমের মত ফোনে ভরা হয় না বরং যখন ফোন তৈরি করা হয় তখন একই সঙ্গে এই সিমও তৈরি করা হয়। এটিকে ফোনের হার্ডওয়্যারের মধ্যেই ধরা হয় এবং একে ফোনের বাইরে বের করা সম্ভব নয়। আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সে এই ই-সিম ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ফোনের হার্ডওয়্যারের পার্ট হলেও ততক্ষণ অ্যাক্টিভেট হয় না যতক্ষণ না এর প্রোফাইল ফোনে অপারেটর নেটওয়ার্ক থেকে ডাউনলোড করা হয়।
ই-সিম কিভাবে কাজ করে?
ই-সিম ফোন হার্ডওয়্যারেরই একটি অংশ এবং অপারেটর প্রোফাইল ডাউনলোড না করা পর্যন্ত এটি অ্যাক্টিভেট হবে না। এতদিন পর্যন্ত আইফোনে অ্যাপেল স্মার্টওয়াচ কানেক্ট করার জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করা হত, কিন্তু এখন ই-সিমের দৌলতে স্মার্টওয়াচ, ফিটনেস ব্যান্ড বা যে কোনো ওয়্যারেবল ডিভাইস সরাসরি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফোনে কানেক্ট করা যাবে। অর্থাৎ যে নাম্বার আইফোনে দেওয়া আছে সেই একই নাম্বার ইউজার তাদের অ্যাপেল ওয়াচেও ব্যবহার করতে পারবেন।
ই-সিমের সুবিধা কি?
আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্স অ্যাপেলের প্রথম ডুয়েল সিম ফোন। এই দুটি আইফোনে একই সঙ্গে দুটি আলাদা কোম্পানির নাম্বার ব্যবহার করা যাবে। ফোনে দুটি সিম স্ট্যান্ডবাই মোডে থাকবে অর্থাৎ একই সময়ে দুটি সিম থেকে কল রিসিভ করা ও ডায়াল করা সম্ভব।
আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সে ডুয়েল সিমের সুবিধা পাওয়া যাবে কিন্তু এর মধ্যে একটি সিম ফোনে ভরতে হবে না এটি আগে থেকেই দেওয়া আছে। সমগ্ৰ বিশ্বে মোট ১৪টি নেটওয়ার্ক অ্যাপেলের ই-সিম ফিচার সাপোর্ট করে। প্রসঙ্গত আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সে দেওয়া ই-সিম সিডিএমএ ও ফোনের ফিজিক্যাল সিম স্লটে শুধু জিএসএম সিম ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ নতুন আইফোনে এক সঙ্গে দুটি জিএসএম বা দুটি সিডিএমএ নাম্বার ব্যবহার করা যাবে না।
ভারতে কিভাবে ই-সিম কাজ করবে?
অ্যাপেল বলে দিয়েছে ভারতে শুধুমাত্র দুটি টেলিকম কোম্পানি আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সের ই-সিম ফিচার সাপোর্ট করবে। এই দুটি কোম্পানি হল দেশের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি এয়ারটেল ও সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলা কোম্পানি রিলায়েন্স জিও। আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্স দেশে এয়ারটেল ও রিলায়েন্স জিওর সঙ্গে বান্ডিল অফারে বেচা হবে।
প্রসঙ্গত রিলায়েন্স জিও ও এয়ারটেল আগে থেকে ভারতে অ্যাপেল ওয়াচ সিরিজ ৩ বিক্রি করছে। অ্যাপেলের এই ওয়াচ সিরিজ ৩ ফোন ছাড়াই কল ডায়াল ও রিসিভ করার সুবিধা দেয়। একই ভাবে আইফোন আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সে অবস্থিত ই-সিমের মাধ্যমে ভোডাফোন ও এয়ারটেল নেটওয়ার্কে কোনো অতিরিক্ত খরচা ও ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি ছাড়াই আইফোনে আসা কল অ্যাপেল ওয়াচ দিয়ে রিসিভ করা যাবে।
কেন চীনে আইফোনের মডেল আলাদা?
অ্যাপেল আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সে দেওয়া ডুয়েল সিম সাপোর্ট চীনের জন্য আলাদা। চীনের সঙ্গে সঙ্গে হংকং ও মাকাউতে ই-সিম ফিচার দেওয়া হবে না। এই সব জায়গার জন্য অ্যাপেল এমন মডেল লঞ্চ করবে যা দুটি সিম স্লট সাপোর্ট করে। অর্থাৎ ইউজার নিজের ইচ্ছামত সিম ব্যবহার করতে পারবেন।
চীন, হংকং ও মাকাউয়ের আইফোন আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সে সিম স্লট একটিই থাকবে কিন্তু এই ট্রের দুটি আলাদা সিম ওপর নিচে লাগানো যাবে। প্রসঙ্গত ভারতে আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্স আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর থেকে কেনা যাবে। নতুন আইফোন গোল্ড, সিলভার ও স্পেস গ্ৰে কালারে পাওয়া যাবে।
যে দেশগুলো ই-সিম সমর্থন করবে:
আপাতত ১০টি দেশে এই ই-সিম সুবিধার আইফোন ব্যবহার করা যাবে। যে ১০টি দেশে এখনই ই-সিম সমর্থন করবে-
- অস্ট্রিয়া
- কানাডা
- ক্রোশিয়া
- চেজ রিপাবলিক
- জার্মানি
- হাঙ্গেরি
- ভারত
- স্পেন
- যুক্তরাজ্য
- যুক্তরাষ্ট্র
পরিশেষে বলা যায় ই-সিমই হল ভবিষ্যত। এমনটাই মনে করছেন ইউজারদের একাংশ। তাই এখন বিনা ঝঞ্ঝাটেই কানেকশন বদলাতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। বর্তমানে হ্যান্ডসেটগুলোতে মাইক্রো সিম ব্যবহৃত হলেও ধারণা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই হ্যান্ডসেটে ন্যানো সিমের জায়গা দখল করে নিবে ই-সিম।
৩ Comments