ইসলামী ব্যাংক লোগোর অন্তর্নিহিত মর্মবাণী

লোগো একটি প্রতীকী ইমেজ, যা সহজেই বুঝা যায় এবং স্বীকৃত হতে পারে এমন ভিজ্যুয়াল চিত্রের মাধ্যমে প্রদত্ত একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে। একটি লোগোতে সাধারণত প্রতীক, স্টাইলাইজড পাঠ্য বা উভয়ই থাকে। লোগোগুলো প্রায়শই একজন পেশাদার গ্রাফিক শিল্পী বা বিশেষজ্ঞ দ্বারা তৈরি করা হয়। মূলত একটি লোগো সম্পূর্ণ বিমূর্ত, প্রতীকী বা পাঠ্য হতে পারে। এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় বিশ্বে তাঁদের পরিচয় বা নাম ট্যাগ স্বতন্ত্রভাবে বিবেচিত হয়। আজকের এই লেখায় ইসলামী ব্যাংকের লোগোর তাৎপর্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে-
ইসলামী ব্যাংকের লোগো নিবন্ধিত
এই লোগোটি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর নামে নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক বা কপিরাইটযুক্ত। এটি একটি অ-মুক্ত লোগো। এই লোগোর কোনো প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা যাবে না যার ফলে লোগোটির ভুল প্রতিনিধিত্ব করতে পারে বা সনাক্তকরণের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে।
ইসলামী ব্যাংকের লোগো ব্যবহারের উদ্দেশ্য
লোগোটির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছে, যা জনস্বার্থের বিষয়। এর তাৎপর্য হল এটি ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদেরকে ইসলামী ব্যাংককে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে, তাদেরকে এর মাধ্যমে বুঝতে সহায়তা করবে।
ইসলামী ব্যাংকের লোগোর ডিজাইনার
ইসলামী ব্যাংকের লোগোটি ডিজাইন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিল্পী জনাব সবিহ্-উল আলম।
ইসলামী ব্যাংকের লোগোর তাৎপর্য
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠালগ্নে বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে যেসব আলোচনা হয়েছিল, তাতে এটাই স্পষ্ট করা হয়েছিল যে, এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকিং সেক্টরে একটি নতুন ধারণার জন্ম দিতে যাচ্ছে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানটি সুদমুক্ত ইসলামী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে তাই এর পরিচিতির জন্য একটি লোগো বা প্রতীকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কেননা একটি লোগো বা প্রতীক একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করে থাকে।
আশির দশকের শুরুতে প্রারম্ভিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মুদ্রণ শিল্প তেমন আধুনিক ছিল না এবং এটি ছিল পুরনো ধাঁচের; ছিল ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ। তাই লোগো মাত্রেরই নকশা করতে হতো এক রঙে। এছাড়া পরবর্তীতে ডিজাইন যাতে বিকৃতির শিকার না হয়, তাই ইসলামী ব্যাংকের লোগো বা প্রতীকে নকশায় বৃত্ত, বৃত্তের মাঝে মিনার এবং সবুজ রং বেছে নেয়া হয়।
বৃত্ত/ উপবৃত্তের প্রতীকী অর্থ- সৃজনশীলতা, নতুন কিছুর উদগম। মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্টির সমস্ত সৃজনশীল/ উৎপাদনশীল আকৃতিতে বৃত্ত/ উপবৃত্তকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন- মানুষের মাথা, মাতৃগর্ভ, মাতৃস্তন, পৃথিবী, ডিম ইত্যাদি এবং আরও অনেক কিছু।
আরও দেখুনঃ
এক্ষেত্রে মিনার- এর কথা না বললেই নয়, যেটার মাধ্যমে মুসলিম শিল্প একটি নতুন ধারার জন্ম দেয়। ভবন নির্মাণে কাঠামোগত (স্ট্রাকচারাল) সমস্যা নিরসনে খিলান এবং গম্বুজের উদ্ভব ঘটলেও এদুটোর উৎকর্ষ সাধন এবং এগুলোতে নান্দনিকতার যোগ করায় মুসলমান স্থপতিগন ভূমিকা পালন করেন।
প্রতীকী অর্থে খিলান একটি দ্বারবিশেষ, যেটা স্বাগতম জানায়, তার মাধ্যমে অনুপ্রবেশের আহ্বান জানায়। এই কারণে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) এর লোগোতে খিলানকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যাতে ব্যাংকের লোগো দর্শনে আকৃষ্ট হয়ে বিপুল জনগোষ্ঠী গ্রাহক হওয়ার বাসনা নিয়ে ছুটে আসে।
খিলানের মাঝখানে রয়েছে আল কুরআনের আয়াত। যে আয়াতের মাধ্যমে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে আর ব্যবসাকে করা হয়েছে হালাল। প্রতিটি রঙেরই প্রতীকী অর্থ সুবিস্তৃত। সবুজ রং প্রশান্তি, সতেজতা, সহ-অবস্থান, সৌম্যতা ইত্যাদির ইঙ্গিত দেয়। সে কারণে সবুজ রং বেছে নেয়া হয়।
সোর্সঃ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ।