নতুন বছরে আপনাকে চমকানোর জন্য প্রস্তুত যেসব প্রযুক্তি!

টিআইবিঃ একবিংশ শতাব্দীর আরো একটি বছর বিদায় নিল। ২০১৮ বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতের জন্য একটি আলোচিত বছর ছিল। সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিতে গত বছর বেশকিছু উদ্ভাবনী প্রযুক্তির দেখা মিললেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কয়েকটি বৃহত্‍ কেলেঙ্কারি এসব প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে বিলীন করে দিয়েছে। তবে চলতি বছর মোবাইল ডিভাইসের মেকানিক্যাল স্লাইডার এবং দ্রুতগতির ডিসপ্লে, পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি ও স্মার্ট ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, আরো উন্নত অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেট এবং ফোল্ডেবল স্ক্রিন ও ডিভাইস বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে চমক সৃষ্টি করবে।

ওয়াটারড্রপ নচ:
গত বছর স্মার্টফোন ডিভাইসে প্রথম নচ ডিসপ্লের দেখা মেলে, যা ব্যাপক সমাদৃত হয়।

নচ ডিসপ্লের সুবিধা হলো- ডিভাইস ডিসপ্লের উপরের অংশের মাঝ বরাবর খুব অল্প জায়গার মধ্যে ক্যামেরা, ইয়ারপিস, প্রোক্সিমিটি ও অ্যামবিয়েন্ট লাইট সেন্সর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর সুবাদে ডিভাইসের আকৃতি না বাড়িয়ে বড় স্ক্রিনের ডিসপ্লে ব্যবহার সম্ভব হয়েছে। তবে চলতি বছর ডিসপ্লের নচ আরো ছোট হয়ে আসবে। ওয়ানপ্লাসের পাশাপাশি হুয়াওয়ে, ভিভো ও অপোর মতো ডিভাইস নির্মাতারা এরই মধ্যে ওয়াটারড্রপ নচ ডিসপ্লের হ্যান্ডসেট বাজারে এনেছে। চলতি বছরই স্মার্টফোন ডিভাইসে দেখা মিলতে পারে ডুয়াল ডিসপ্লে।

টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

৯০ ও ১২০ হার্টজ ডিসপ্লে:
ডিভাইস ব্যবহারকারীদের অনেকে সারা দিন ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিছু ডিভাইস নির্মাতার ডিসপ্লে অন্যদের চেয়ে উন্নত। সাশ্রয়ী থেকে প্রিমিয়াম সব হ্যান্ডসেটেই এখন উচ্চ রেজল্যুশন, উজ্জ্বল ও হাই-এন্ড অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড বা ওএলইডি ডিসপ্লে দেখা যায়। প্রচলিত সব ধরনের ডিসপ্লেরই একটি ঘাটতি রয়ে গেছে, তা হলো রিফ্রেশ রেট। ডিসপ্লের জন্য আদর্শ রিফ্রেশ রেট হলো ৬০ হার্টজ। অর্থাত্‍ কেউ যখন স্মার্টফোন ডিসপ্লেতে কোনো ছবি দেখেন, তখন এই আদর্শ রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লে প্রতি সেকেন্ডে ৬০ বার ওই ছবিকে রিফ্রেশ করে। কাজেই রিফ্রেশ রেট বাড়ানো হলে মোবাইল ডিভাইসে কোনো চলমান কনটেন্ট দেখার সময় ঝাপসাভাব দূর করবে। এর ফলে ডিসপ্লের গতি বাড়বে। ৯০ কিংবা ১২০ হার্টজের ডিসপ্লে ব্যবহার করলে কেউ আগের স্ট্যান্ডার্ডে ফিরে যেতে চাইবেন না। চলতি বছরই দ্রুত রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লে সংবলিত হ্যান্ডসেট বাজারে মিলবে।

ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট:
বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে, যা চলতি বছর আরো উন্নত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভাইস এখন একটি পরিবারের একাধিক সদস্যের ভয়েস কমান্ড শনাক্তের সক্ষমতা অর্জন করবে। এর ফলে একেক জনের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারবে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভাইস। চলতি বছর স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট স্মার্টফোনের পাশাপাশি সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্যে ছড়িয়ে পড়বে। অর্থাত্‍ স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মিডিয়া প্লেয়ার, গাড়ি, ডিজিটাল প্রজেক্টর ও অ্যাকশন ক্যামেরার মতো ডিভাইসে ভার্চুয়াল সহকারী ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রযুক্তি মিলবে।

উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি ও দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি:
ডিভাইসে ব্যাটারির সক্ষমতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছবে এবং দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি আরো উন্নত হবে। গত বছর সব ধরনের মোবাইল ডিভাইসেই শক্তিশালী ব্যাটারির দেখা মিলেছে। একই সঙ্গে ডিভাইস ব্যাটারি উত্তপ্ত হওয়ার যে সমস্যা, তার স্থায়ী সমাধান মিলতে পারে। গত বছর ওয়ানপ্লাস ড্যাশ চার্জ প্রযুক্তি দারুণ সাড়া ফেলেছে। এ প্রযুক্তি সংবলিত হ্যান্ডসেটের ব্যাটারি ৩৫ মিনিটে শূন্য থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ হয়। এর ফলে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমোতে যাওয়ার প্রথা এখন অনেকটাই বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তি:
ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তি নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তির কারণে স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। চলতি ডিভাইস আসক্তির স্থায়ী সমাধান আসতে পারে। অর্থাত্‍ ব্যবহারকারী ডিভাইস স্ক্রিনে কত সময় ব্যয় করছেন, তা এখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানা যায়। চলতি বছর ডিভাইসেই বিল্টইন ফিচার মিলবে, যা সহনীয় মাত্রার বেশি সময় ডিভাইস ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে। ডিভাইস ব্যবহার করে কোন অ্যাপে কত সময় ব্যয় করা হচ্ছে, তার বিস্তারিত তথ্য জানাবে হ্যান্ডসেটের বিল্টইন ফিচার।

৫জি:
কয়েক বছর ধরেই পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ৫জি উন্নয়নে কার্যক্রম চলছে। চলতি বছর দ্রুতগতির এ নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হবে। বলা হচ্ছে, বিদ্যমান ৪জি নেটওয়ার্কের চেয়ে ৫জিতে শতগুণ দ্রুতগতির সেবা মিলবে। ৫জির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার শুরু হলে অপটিক ফাইবার কেবল সংযোগের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অগমেন্টেড রিয়েলিটি:
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর হেডসেট এখন অনেকের হাতেই পৌঁছেছে। চলতি বছর এর স্থান দখলে নিতে পারে আরো উন্নত অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি।

ফোল্ডেবল ডিসপ্লে:
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ফ্লেক্সিবল কিংবা ভাঁজ করা যাবে এমন ডিসপ্লের হ্যান্ডসেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক স্যামসাং থেকে শুরু করে হুয়াওয়ে ও মাইক্রোসফটের মত প্রতিষ্ঠান ফোল্ডেবল হ্যান্ডসেট উন্মোচনে কাজ করছে। চলতি বছরই ফোল্ডেবল ডিসপ্লের ডিভাইস মিলবে, যা স্মার্টফোনের পাশাপাশি ফোল্ড খুলে ট্যাবলেট ডিভাইস হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

সর্বত্রই বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি:
মোবাইল ডিভাইস আনলকের জন্য এখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেস আনলক প্রযুক্তি সর্বত্রই ব্যবহার হচ্ছে, যা পাসওয়ার্ড কিংবা সিকিউরিটি প্যাটার্নের চেয়ে কার্যকর। আইফোন টেন দিয়ে অ্যাপল প্রযুক্তি বিশ্বের সামনে প্রথম ফেস আনলক সিস্টেম উন্মোচন করেছে, যা ফেস আইডি প্রযুক্তি নামেও পরিচিত। চলতি বছর পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি প্যাটার্ন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি প্রযুক্তি আবেদন হারাবে এবং ফেস আইডি প্রযুক্তি ব্যাপক পরিসরে ব্যবহার হবে।

সূত্র: ইকোনমিক টাইমস

Leave a Reply

Back to top button