ইসলামী ব্যাংকের সাব-স্টাফদের পদোন্নতি প্রসঙ্গে

সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের অফিসার ও নির্বাহীদের পদোন্নতি হয়েছে, যেটি ব্যাংকের জনশক্তির মধ্যে ব্যপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। আমরা মনে করি এটি সামনের দিকে ব্যাংকের ব্যবসা উন্নয়নসহ সব ধরনের কর্মকান্ডে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা ব্যাংকের শুভার্থী হিসেবে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এই খবরের পাশাপাশি ব্যাংকের সাব-স্টাফসহ নীচের দিকের পদোন্নতি নিয়ে কিছু বিরূপ মন্তব্য ও মনোকষ্টের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে যেটি আমাদের কাছে কষ্টকর ও অনভিপ্রেত বলেই মনে হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের নামের সাথে একটি কথা লেখা হতো ‘কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক‘। কথাটির উদ্যোক্তা ছিলেন যতদূর আমার মনে পড়ে, ব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী, কিংবদন্তি ব্যাংকার মরহুম লুৎফর রহমান সরকার। কেননা ইসলামী শরীয়াহর মূল উদ্দেশ্যই মানুষের কল্যাণ। তাঁর হাত ধরেই ব্যাংকটি বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছিল যাতে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ ব্যাংকের মাধমে উপকৃত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গৃহ সামগ্রী বিনিয়োগ প্রকল্প, ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রকল্প এবং পল্লী বিনিয়োগ প্রকল্প।

‘সম্পদ যাতে গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে আবর্তিত না হয়‘- আল কুরআনের এই মৌলনীতিকে প্রাধান্য দিয়েই এই প্রকল্পগুলো গৃহীত হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ নিম্নবিত্তের মানুষ উপকৃত হয়েছে একই সাথে ব্যাংকের ভাবমূর্তি বেড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যপকভাবে।

টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

সাধারণ জনগণের কল্যাণের পাশাপাশি ব্যাংকটি তার কর্মীদের কল্যাণেও ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছিল। বেতন ভাতার মধ্যে অস্বাভাবিক বৈষম্য না রেখে একটি সুষম পে-স্কেল প্রণয়নে এই ব্যাংকটি বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে পাইওনিয়ার ছিল।

জন্ম থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বেতন ছিল অন্য বেসরকারী ব্যাংকের তুলনায় সর্বাপেক্ষা কম। বর্তমান অবস্থা আমার জানা নেই। এ নিয়ে কিন্তু সিনিয়র নির্বাহীদের মধ্যে তেমন কোনো হা পিত্যেশ ছিল না। এই ব্যাংকের সাব-স্টাফগণ (মেসেঞ্জার, গার্ড, ড্রাইভার ইত্যাদি) তুলনামূলক বেশি সুবিধা পেতেন। উচ্চ শিক্ষিত সাব-স্টাফগণ যাতে পদোন্নতি পেয়ে তাদের যোগ্যতা দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারেন, সেজন্য তাদের পদোন্নতির একটি ক্রাইটেরিয়া নির্ধারন করা ছিল এবং সে অনুপাতে তারা পদোন্নতি লাভ করতেন। এমনকি ব্যাংকের ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রকল্পের মাঠকর্মী এবং ক্লীনারদেরও পর্যায়ক্রমে নিয়মিত করণের কাজ শুরু হয়েছিল।

আমাদের মত একটি দেশে সকলেই শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ পায় না; ফলে অনেক মেধাবী তরুণ ও যুবক বাধ্য হয়ে নিম্ন পদে যোগদান করেন জীবন জীবিকার তাকিদে। তাদের মধ্যে সকলে না হলেও কিছু থাকেন যারা সুযোগ পেলে চমৎকার পারফরমেন্স দেখাতে পারেন। আমার জানা মতে মরহুম এ আর ভুঁইয়া পাকিস্তান আমলে হাবীব ব্যাংকে যোগদান করেছিলেন ড্রাইভার হিসেবে। পরবর্তীতে অগ্রণী ব্যাংকে তিনি ডিজিএম হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন এবং ব্যাংকের ডিসিপ্লিন এ্যান্ড আপিল ডিভিশনের প্রধান হিসেবে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন।

সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কথাটি এসেছে যে, সাব-স্টাফদের পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং যদি তা সঠিক হয়, আমরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ করবো সেটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য। এ ছাড়াও একবার প্রদত্ত সুযোগ সাধারণত বন্ধ করা হয় না। বন্ধ করতে হলেও ন্যায় বিচারের দাবী হচ্ছে পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তা উল্লেখ করে দেয়া যে, এটি একটি ব্লক ক্যাডার; এখানে কোনো পদোন্নতি নেই।

এছাড়া পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের জনশক্তিকে মূলধারায় পদোন্নতি দেয়ার একটি ক্রাইটেরিয়া আছে, সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে বলেই আমরা মনে করি। প্রয়োজনে সেটা রিভিউ করা যেতে পারে। একই সাথে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক এবং ক্লীনারদের চাকুরী নিয়মিত করণের বিষয়টিও অব্যাহত রাখবেন বলে আমরা আশা করছি। কর্মচারীদের কল্যাণে ইসলামী ব্যাংক অন্যের জন্য দৃষ্টান্ত হবেন, যেমনটি তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়েছেন, এটি ব্যাংকটির সোয়া কোটি গ্রাহকেরও প্রত্যাশা।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যাংকটির দায়িত্ব নেয়ার পরে বেতন বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু উৎসাহমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা আশা করি নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের পদোন্নতির বিষয়টিও তারা সহানুভূতির সাথে দেখবেন। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই তার আসল সম্পদ এ সত্যটি আমাদের চেয়ে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আরও বেশি ভাল জানেন নিঃসন্দেহে।

লেখক: নুরুল ইসলাম খলিফা, বিশিষ্ট ব্যাংকার ও কলামিস্ট।

Related Articles

Back to top button