সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে

সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নিয়োগ পরীক্ষা ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) মাধ্যমে সমন্বিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকগুলো নিজেদের নিয়োগ পরীক্ষা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন—AUST, BIBM, IBA-DU, Business Faculty-DU, E-zone HRM ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পন্ন করে। ফলে বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন ও মানবণ্টন ভিন্ন ভিন্ন হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সিনিয়র অফিসার, অফিসার, অফিসার (ক্যাশ)-এর লিখিত পরীক্ষার নম্বর বণ্টন অনেকটা এমন—

• গণিত/অঙ্ক (৭০/৮০ নম্বর)
• Focus Writing in English (২০ নম্বর)
• Focus Writing in Bangla (৩০ নম্বর)
• Translation: English to Bangla (২০ নম্বর)
• Translation: Bangla to English (২০ নম্বর)
• Comprehension (২০ নম্বর)
• Letter/Application/Report Writing (২০ নম্বর)

টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

গড় ধারণা দেওয়ার জন্য বিগত বছরের প্রশ্নপত্রের আলোকে এ নম্বর বণ্টন দেওয়া হলো। বিষয়বস্তু ভেদে নম্বর কমবেশি হতে পারে। তবে প্রশ্ন সাধারণত উল্লিখিত বিষয়বস্তুর ওপরই হয়।

অঙ্ক/গণিত:
প্রশ্নপত্রের সবচেয়ে বেশি নম্বর থাকে গণিতে। সাধারণত শতকরা, সুদ-কষা, লাভ-ক্ষতি, অংশীদারি কারবার, বয়স, অনুপাত, বিন্যাস ও সমাবেশ, সমীকরণ ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষায় বেশি প্রশ্ন আসে। বিগত বছরগুলোর লিখিত পরীক্ষার গণিতের প্রশ্ন ও সমাধান আছে এমন গাইড বই বাজারে পাওয়া যায়। সম্ভব হলে এগুলো দেখে বুঝে বুঝে সমাধানের চেষ্টা করুন। শুধু সমাধানে চোখ বুলিয়ে গেলে পরীক্ষার হলে অঙ্ক মেলাতে পারবেন না, তাই নিজে অন্তত একবার লিখে সমাধান করুন।

প্রশ্ন দেখে নিজে নিজে উত্তর করার প্র্যাকটিস করুন। উত্তর করার পরে দরকার হলে গাইড বই দেখে সঠিক হলো কি না মিলিয়ে নিন। ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির বোর্ডের গণিত বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা/অঙ্কের সমাধান করলেই প্রস্তুতি অনেকটাই পোক্ত হবে। ২০১৫-২০১৯ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার অঙ্কগুলো ভালো করে রিভিশন দিন, বিশেষ করে AUST, Scoial Science-DU, Arts faculty-DU, BIBM, IBA-উট ইত্যাদির অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার অঙ্কগুলো। এছাড়া examveda.com, affairscloud.com, indiabix.com ওয়েবসাইট থেকে কিছু বাছাইকৃত অঙ্ক অনুশীলন করতে হবে।

আরেকটি বিষয় বলে রাখা দরকার, শর্টকাট মেথডে অঙ্ক না করাই ভালো। কারণ দীর্ঘ মেয়াদে এটা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ফোকাস রাইটিং:
সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে Essay বা প্রবন্ধ রচনা লিখতে বলা হবে। হতে পারে দেশের চলমান অর্থনীতি, রাজনীতি, ব্যাংকিং সেক্টর, তথ্য-প্রযুক্তি, ঐতিহাসিক ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দেশের বা আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা।

উদাহরণ হিসেবে গত ২৫ মে ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত সমন্বিত ছয়টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার (জেনারেল) পদের নিয়োগ পরীক্ষার কথা বলা যায়। সে পরীক্ষার প্রশ্নে ইংরেজিতে “Positive and negative effects of What’s App”-এর ওপর essay লিখতে বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে বাংলায় ‘ইন্টারনেট: বিশ্বের সেতুবন্ধন’ সম্পর্কেও একটি প্রবন্ধ রচনা ছিল।

ফোকাস রাইটিং লেখায় কৌশলী হতে হবে। যেমন—দুই লাইনে ভূমিকা ও উপসংহার লেখার চেষ্টা করতে হবে। ভূমিকা এমনভাবে লিখতে হবে, যাতে দুই কথায়ই পুরো ধারণা পাওয়া যায়। উপসংহারে নতুন করে কিছু না লিখে ওপরে যা লেখা হয়েছে তা-ই সংক্ষেপে তুলে ধরলে চলবে। লেখা যতটা সম্ভব তথ্যবহুল করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, আদমশুমারি, সংবিধান, বিবিএস ওয়েবসাইট, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স থেকে কোটেশন, তথ্য, চার্ট ও ডাটা সংগ্রহ করে আয়ত্ত করতে হবে, শুধু তথ্য দিলেই হবে না, উপস্থাপনাও হতে হবে গোছালো।

অনুবাদ (Traslation):
অনুবাদ দুইভাবে আসতে পারে—ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজি। শব্দভাণ্ডার (Vocabulary) সমৃদ্ধ হলে উভয় ক্ষেত্রেই ভালো করা যাবে। পাশাপাশি গ্রামারেও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে, নতুন নতুন Word নজরে এলেই ডিকশনারি খুলে অর্থ দেখতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নে আসা অনুবাদগুলো অনুশীলন করতে হবে।

সহজে অনুবাদ করার জন্য কিছু টেকনিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন—ভাব ও অর্থ ঠিক রেখে প্রয়োজনে দুটি ইংরেজি বাক্যকে একটি বাংলা বাক্যে বা দুটি বাংলা বাক্যকে একটি ইংরেজি বাক্যে অনুবাদ করে দেখতে পারেন। সরল বাক্যকে জটিল বাক্যে বা জটিল বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর করেও লিখতে পারেন।

Comprehension:
এই প্রশ্নে একটি Passage থাকে। অনেকেই Comprehension কমবেশি না পড়েই উত্তর দেন। তাই এ অংশে ভালো নম্বর তুলতে পারেন না। অথচ একটু সময় দিলেই ২০-এর মধ্যে ১৬-১৭ নম্বর তোলা যায়! এর জন্য উত্তরটা প্যাসেজ থেকে খুঁজে বের করে হুবহু না লিখে নিজের মতো করে লিখুন। সে রকম কিছু মাথায় না ধরলে উত্তরের মূলভাব অক্ষুণ্ন্ন রেখে অন্তত সিনোনিম বা এন্টোনিম ব্যবহার করে একটু ভিন্নতা আনার চেষ্টা করুন।

প্রশ্নটি যে টেনসে থাকবে উত্তরটা সেই টেনসেই লিখতে হবে। অনেক সময় সামারি লিখতে বলা হয়। সাধারণত একটি প্যাসেজের প্রথম কয়েক লাইন ও শেষ কয়েক লাইনের মধ্যে এর মূলভাব থাকে। তাই প্রথম কয়েক লাইন ও শেষ কয়েক লাইন একটু খেয়াল করে পড়লে সহজে উত্তর করা যাবে।

লেটার/Application/Report writing:
এ অংশে নম্বর ওঠানো সবচেয়ে সহজ। প্রশ্নে সাধারণত একটি লেটার/আবেদনপত্র/রিপোর্ট রাইটিং দেওয়া থাকে, এর আলোকেই উত্তর করতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা নানা ধরনের আবেদনপত্র, চিঠি ও রিপোর্ট রাইটিংয়ের ফরম্যাট দেখে প্রতিটি থেকে কমপক্ষে একটি করে অনুশীলন করতে হবে। লেটার/আবেদনপত্রের ক্ষেত্রে যেহেতু এর ফরম্যাটের ওপরও মার্কস আছে, তাই ফরম্যাট যেন ভুল না হয়।
কার্টেসি: সালেহ উদ্দিন, সাবেক বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button