অনলাইন পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত ২০১৮ সালের সেরা কিছু টিপস

টেকনো ইনফোঃ আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। তথ্য প্রযুক্তির যুগে দিন যত যাচ্ছে মানুষ ততই প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে। আর এই মাত্রাকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে ইন্টারনেট তথা সাইবার দুনিয়া।

তবে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। যেমন, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কম্পিউটারের তথ্য থেকে শুরু করে ফেসবুকের একাউন্ট, ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, ই-মেইল ইত্যাদি অনেক কিছুই চলে যাচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কাছে। তবে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব যদি আপনি এর পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত বিষয়ে একটু সচেতন থাকেন।

পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত ২০১৮ সালের সেরা কিছু টিপস

নতুন সাইট বা অ্যাপে পাসওয়ার্ড প্রবেশে সতর্ক থাকুনঃ

কোন সাইট বা অ্যাপে প্রবেশ করার সময় বা পাবলিক কিউস্ক বা চার্জিং স্টেশন গুলোতে পাসওয়ার্ড প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। পাবলিক ওয়াইফাই, এয়ারপোর্ট, প্রিয় কফি শপ, হোটেল কক্ষ বা আপনার কলেজ ক্লাস রুমের কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড ব্যবহারে বিরত থাকতে হবে। আর সেসব পাবলিক জায়গা গুলো থেকে কখনোই আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করবেন না। ব্যক্তিগত স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থেকেই সেটা করতে হবে।

প্রতিটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুনঃ

শুধু ফেসবুক বা ই-মেইল অ্যাকাউন্টই নয়! এসব অ্যাকাউন্ট ছাড়াও প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর থাকে আরও প্রয়োজনীয় নানা অ্যাকাউন্ট। সচারচর প্রত্যেক অনলাইন ইউজার তাঁর সকল অনলাইন অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকেন। অর্থাৎ ফেসবুক, জিমেইল, ইয়াহু কিংবা যেকোন ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা মোটেও ঠিক না। কারণ কোন কারণে আপনি যদি হ্যাকিং –এর শিকার হোন। তবে হ্যাকার আপনার একটি মাত্র পাসওয়ার্ড জেনেই সহজেই আপনার সকল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে। তাই আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্টের জন্য দিন পৃথক পৃথক পাসওয়ার্ড।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুনঃ

পাসওয়ার্ড হলেই হবেনা। যেন আপনার পাসওয়ার্ড হয় অনেক শক্তিশালী। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে। গবেষণামূলক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সহজ ধরণের পাসওয়ার্ড সাধারণত অনেক সহজেই হ্যাক হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কিভাবে শক্তিশালী / জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি করবেন? বিভিন্ন ক্যারেক্টার, স্পেশাল চিহ্ন, সংখ্যা মিলিয়ে বানাতে পারেন আপনার শক্তিশালী পাসওয়ার্ড। তবে পাসওয়ার্ডে নূন্যতম ৮ অক্ষরের বেশী রাখবেন। ছোট-বড় অক্ষরের মিশ্রণ রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ। বেশীরভাগ লোকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই তাদের নাম, মোবাইল নম্বর কিংবা জন্ম তারিখকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এ ধরণের পাসওয়ার্ড পরিচিত লোকজনেরা খুব সহজেই বের করে ফেলতে পারেন। তাই মোটেও এ ধরণের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেকের মাঝেই 12345, 123123, abcdef, abc123 এই ধরণের সহজ পাসওয়ার্ড দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ ধরণের পাসওয়ার্ড কখনো ভুলেও ব্যবহার করবেন না। এক কথায়, নিজ বুদ্ধিতে তৈরি করুন শক্তিশালী কোন পাসওয়ার্ড।

আপনার একাউন্টে আক্রমণ করার চেষ্টা হলে নোট রাখুনঃ

যদি খবর পান আপনার ব্যবহৃত ওয়েবসাইট বা অ্যাপে কোন আক্রমণ হয়েছে তাহলে সেটা সতর্কতার সাথে আমলে নিতে হবে। অন্য কেউও যদি আক্রান্ত হয় তাহলেও নজর দিবেন। আর দ্রুত পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলাও জরুরী হতে পারে।

কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার করুনঃ

আপনার একাউন্টে প্রবেশ করার জন্য দু’স্তর বা তার চেয়ে বেশি স্তরের অথেন্টিকেশন ব্যবহার করুন। কোন একাউন্টে প্রবেশ করতে হলে আপনার ফোন নাম্বার বা কয়েক স্তরের পদক্ষেপ যেন নিতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ফিশিং সাইট থেকে বিরত থাকুনঃ

কোন ওঁত পেতে থাকা ফিশিং সাইটে আপনার পাসওয়ার্ড দিলেই হ্যাকিং এর সম্মুখীন হবেন নিশ্চিত। তাই ফিশিং সাইট গুলো থেকে রক্ষা পেতে সব সময় সাবধান থাকুন। একটু খেয়াল রাখলেই ফিশিং সাইটের ফাঁদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। মূল্যবান অ্যাকাউন্ট যেমনঃ ফেসবুক, জিমেইলের লগইন পেইজের মতো দেখতে অনেক পেজ দেখা যায় অনলাইনে। এই ভুয়া পেজ বা সাইটগুলোই হলো ফিশিং সাইট। এই ধরণের সাইটে কখনই সত্যিকারের সাইট ভেবে লগইন বা রেজিস্টার করবেন না। অরিজিনাল সাইট ছাড়া কোন সাইটেই রেজিস্টার বা লগইন করবেন না। হ্যাকাররা মূলত বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এসব ফিশিং সাইটে লগইন করতে উদ্ধুদ্ধ করে থাকে।

ইউনিক রাখুন আপনার ই-মেইলের পাসওয়ার্ডঃ

আপনি যে সাইটেই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য রেজিস্ট্রেশন করুন না কেন। আপনার সকল অ্যাকাউন্টের মূলে রয়েছে আপনার ই-মেইল। তাই সবার আগে নিতে হবে ই-মেইল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা। কারণ ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে আপনার যেকোন অনলাইন অ্যাকাউন্টই হ্যাক করা সম্ভব। তাই ই-মেইল অ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি নিয়ে সচেতন থাকুন সবচেয়ে বেশী। কারণ আপনার ই-মেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদে থাকলে আপনার অন্য যেকোন অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেও দ্রুত পুনরুদ্ধার করার সুযোগ পাবেন। তাই ই-মেইলের পাসওয়ার্ড সবসময় শক্তিশালী এবং ইউনিক রাখেবন। ই-মেইলে যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন সেই পাসওয়ার্ড যেন অন্য কোন সাইটের অ্যাকাউন্টে ব্যবহার না করেন সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

অন্যের ডিভাইসে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করা থেকে বিরত থাকুনঃ

নিরাপত্তার জন্য অনেক বিষয়েই আপনাকে থাকতে হবে সতর্ক। তাই অন্যের ডিভাইস যেমনঃ পিসি, ট্যাব, স্মার্টফোন ইত্যাদিতে নিজের যেকোন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে সাইবার ক্যাফের কম্পিউটারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। কারণ আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে সেই ডিভাইসে থাকতে পারে কোন বিশেষ প্রযুক্তি। যেমনঃ কি-লগার

কাজ শেষে লগ আউট করতে ভুলবেন নাঃ

কাজ শেষে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে অবশ্যই লগ আউট করবেন। এমনকি ব্যক্তিগত কম্পিউটারেও সেটা করা উচিত। কারণ আপনার অনুপস্থিতে যে কেউ আপনার ডিভাইসে উক্ত অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে। তাই কাজের শেষে অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট হতে ভুলবেন না।

নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুনঃ

নিয়মিত আপনার গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলো পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করার চেস্টা করবেন। প্রতি মাসে অন্তত একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন। এছাড়াও অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং জনিত কোন সন্দেহ দেখা দিলেই দেড়ি না করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলুন। এতে সুরক্ষিত থাকবে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট।

সাবধান থাকুন কি-লগার সফটওয়্যার থেকেঃ

কি-লগার হলো এক ধরণের হ্যাকিং সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার যে ডিভাইসে ইন্সটল করা থাকে, ঐ ডিভাইসে ব্যবহারকারী তাঁর পাসওয়ার্ড টাইপের সময় পাসওয়ার্ড চুরি করে থাকে। অবশ্যই, আপনি কি-লগার সফটওয়্যারের ফাঁদে পড়তে চান না? কিন্তু কি-লগারের ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে আপনাকে হতে হবে বেশ সতর্ক। কারণ এ ধরনের সফটওয়্যার আপনার অজান্তেই আপনার ডিভাইসে অন্য যে কোন ভাবে ইন্সটল হতে পারে। অনলাইন থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় আপনার চোখের আড়ালেই আপনার ডিভাইসে ঢুকে পড়ে হ্যাকারদের প্রেরিত কি-লগার সফটওয়্যার। তাই অনলাইনে ফাইল ডাউনলোড করুন বিশ্বস্ত সোর্স থেকে। এছাড়া অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারও ব্যবহার করতে পারেন নিরাপত্তার জন্য।

অধিক সাবধানতার জন্য ব্যবহার করুন অন স্ক্রিন কি-বোর্ডঃ

হ্যাকিং বিষয়ক কি-লগার সফটওয়্যার গুলো মূলত আপনার ডিভাইসের কি-বোর্ড ট্র্যাক করে থাকে। তাই অধিক সাবধানতা এবং কি-লগারের ফাঁদ থেকে বাচতে চাইলে পাসওয়ার্ড টাইপ করতে ব্যবহার করতে পারেন অন স্ক্রিন কি-বোর্ড। এর ফলে আপনার পাসওয়ার্ড টাইপ ট্র্যাকিং করতে পারবেনা কি-লগার টাইপের সফটওয়্যার গুলো।

সহজে অনলাইনে পাওয়া যায় এমন তথ্য দিয়ে পাসওয়ার্ড পরিহার করুনঃ

ধরেন আপনার পোষা বিড়ালটাকে খুব পছন্দ করেন। তার নাম রাখলেন সুইটি। এখন সেটা দিয়ে যদি পাসওয়ার্ড রাখেন তাহলে অন্যরা কিন্তু ধরে ফেলতে পারেন। আপনি হ্যারি পটার ফ্যান তাই বলে হ্যারি পটার পাসওয়ার্ডে নিয়ে আসবেন না।

যুক্ত একাউন্ট এড়িয়ে চলুনঃ

যুক্ত একাউন্ট বিষয়টি কি? ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করে আপনি ইচ্ছে করলে অন্যান্য সাইটেরও একাউন্ট খুলতে পারেন। কিন্তু এটা না করে সেই ওয়েবসাইটে গিয়ে নতুন করে একাউন্ট খোলাই ভালো। যুক্ত একাউন্ট অনেক আরামদায়ক। কিন্তু এ আরামদায়ক ব্যবস্থার অনেক ঝুঁকি আছে।

আশা করছি এই সিকিউরিটি টিপস গুলো জানা থাকলে এবং সে অনুযায়ী সচেতন থাকলে ইন্টারনেট দুনিয়ায় আপনি তুলনামূলক সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোন সমস্যার জন্য আমাদেরকে জানাতে পারেন আমরা আপনার সমস্যার সঠিক ও সুন্দর সমাধান দিতে চেষ্টা করবো।

Leave a Reply