
সম্প্রতি দেশের জাতীয় দৈনিক ও সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে নানা তথ্য নিয়ে বেশ কিছু লেখালেখি পরিলক্ষিত হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে অনেক গ্রাহক তাদের আমানত উত্তোলন করতেও শুরু করেছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক এর গ্রাহকের আমানত নিরাপদে থাকবে কি না, সে বিষয়ে গ্রাহকের মাঝে নানা সংশয় দেখা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে শীর্ষে আছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। আমানতেও ইসলামী ব্যাংক সবার শীর্ষে। ২০২১ সাল শেষে ইসলামী ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা, যা সোনালী ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমানত থাকা পূবালী ব্যাংকের চেয়ে এটি তিনগুণ।
টেকনো ইনফো বিডি‘র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ টেকনো ইনফো বিডি তে লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। |
বর্তমানে এই ব্যাংকের আমানত প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। শুধু আমানতে নয়, ঋণ/বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্সেও ইসলামী ব্যাংক শীর্ষে। বর্তমানে এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে এই ব্যাংকের, যা দেশের মোট বিনিয়োগের ১২ শতাংশের বেশি। বৈদেশিক মুদ্রায় শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। সারাবিশ্ব থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসে, তার ২৯ শতাংশ আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আরব দেশগুলো থেকে যেসব রেমিট্যান্স আসে, তার ৫২ শতাংশ আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক শীর্ষে রয়েছে। সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার গ্রামের ১৬ লাখ গ্রাহক এই ব্যাংকের পল্লি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে, যার ৯২ শতাংশই মহিলা। গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত ও বেগবান করতে এসব মহিলা ভূমিকা পালন করে আসছে। ইসলামী ব্যাংক দেশের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিতরণেও ভূমিকা পালন করে আসছে। কৃষি খাতকে চাঙা করতে করোনাকালে ইসলামী ব্যাংক কৃষকের মাঝে বীজ, সার ও কৃষি উৎপাদনে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ৫৫টি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ইসলামী ব্যাংক একাই দুই হাজার কোটি টাকা অর্থ বিতরণ করেছে।
তৈরি পোশাক, নিত্য খাদ্যপণ্য, পরিবহন, আবাসন, চামড়া, চিংড়িসহ শিল্প খাতেও বিনিয়োগের শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বৃহৎ শিল্পগ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আবুল খায়ের, বিআরবি, বসুন্ধরা, যমুনা গ্রুপসহ নামকরা শিল্পগ্রুপে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে। এই ব্যাংকের আমানত সংরক্ষণ, বিনিয়োগ প্রদান এবং কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে এমন বিস্তৃতি সম্ভব হয়েছে গ্রাহকের ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা ও সহযোগিতার মাধ্যমে। কাজেই এই ব্যাংকের সঙ্গে আমানতকারী ও গ্রাহকসহ শুভাকাক্সক্ষীদের আস্থা অনেক মজবুত। প্রবাসী বন্ধুদের বিশ্বস্ত ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা, প্রবাসীদের আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে আহরণের ভূমিকা পালন করছে ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যায়, এককভাবে দেশের এক-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স আহরিত হয় এই ব্যাংকের মাধ্যমে। যতদূর জানা যায়, এই ব্যাংকের প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে জমা আছে। গত নভেম্বর মাসেও রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে ছিল ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকের মাধ্যমে নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ৩০ শতাংশের বেশি। দেশের প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ গ্রাহক আস্থার সঙ্গে এক লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা জমা রেখেছে এই ব্যাংকে, যা দেশের মোট আমানতের এক-দশমাংশ। ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যায়, বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এই ব্যাংক। সম্প্রতি কয়েকটি দৈনিকে ইসলামী ব্যাংকের বৃহৎ ঋণ ছাড়ের যে বিষয়টি এসেছে, তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা ও সন্দেহ তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান অবস্থান পরিষ্কার করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। বাজারে যে গুজব রয়েছে, তা একটি ভালো প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতিবন্ধকতা কোনোভাবেই তৈরি করতে পারবে না। আমরা যতদূর জানি, এই ব্যাংক দেশের সব বিধিবদ্ধ আইন, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিয়মনীতি পরিপালন করে আসছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসলামী ব্যাংকের অবদানকে মূল্যায়ন করছে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক দ্য এশিয়ান ব্যাংকার্স ম্যাগাজিন ইসলামী ব্যাংককে ‘স্ট্রংগেস্ট ব্যাংক ইন বাংলাদেশ’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে, যা এ দেশের ব্যাংকিং ও অর্থনীতির জন্য একটি বড় স্বীকৃতি। এছাড়া ১০ বছর ধরে বিশ্বসেরা এক হাজার ব্যাংকের তালিকায় ইসলামী ব্যাংক দেশের শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে অবস্থান করছে। ইসলামী ব্যাংকিং ৪০ বছর পথচলায় দেশের আরও ৯টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের পথ চলাকে সুগম করেছে। কাজেই এই ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা এত সহজেই দুর্বল হওয়ার নয়। দেশের মোট ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে এখন ১০টি ইসলামী ধারার ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। অন্য ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, আল-আরাফাহ্, এক্সিম, শাহজালাল, স্ট্যান্ডার্ড ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।
সম্প্রতি ইসলামী ধারার কয়েকটি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের খবর জনসম্মুখে ্আসার পর আমানতকারীদের মধ্যে নানা সন্দেহ ও সংশয় দেখা দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদক তদন্ত করছে। গ্রাহকের অন্যতম আস্থার ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে যে ব্যাংকটি আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে জনগণের আমানতের হেফাজত করছে, তা এত সহজে নষ্ট হওয়ার নয়। এই ব্যাংকের কর্মচারীদের সঙ্গে গ্রাহকের আন্তরিকতা ও আস্থা বিরাট শক্তি। দেশের অর্থনীতিকে যে ব্যাংক নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেই ব্যাংক সম্পর্কে নানা গুজবে গ্রাহকেরা ভীত নয়। তারা তাদের আমানত এই ব্যাংকেই রাখবে। ১৯৮৩ সালের ৩০ মার্চ ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা ৭৫ মতিঝিলস্থ তিনতলায় একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে ব্যাংকটির পথচলা শুরু হয়েছিল, সেটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম ইসলামী শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এদেশের সব ধর্মের মানুষ এই ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রতি মানুষের আস্থা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এদেশের প্রায় আরও ৯টি ব্যাংক ইসলামী ধারায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। জাতীয় অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় ইসলামী ব্যাংকগুলো গতানুগতিক ব্যাংকিং ধারার চেয়ে অনেক বড় পরিসরে ভূমিকা পালন করে আসছে। কাজেই ইসলামী ব্যাংকের কোনো সমস্যা হওয়া মানেই দেশের অর্থনীতির ভিত নড়ে যাওয়া। তাই আমানতকারী ও বিনিয়োগ গ্রহীতাদের কষ্টার্জিত আমানত ব্যাংকেই নিরাপদ।
আরও দেখুন:
– খাদের কিনারে ব্যাংকিং খাত: ইসলামী ব্যাংক থেকে আস্থা নষ্ট করাই আসল উদ্দেশ্য- ০১
– যারা ভাবছেন ইসলামী ব্যাংক তো শেষ!
– ইসলামী ব্যাংক এখন দেশের ব্যাংক খাতের মেরুদণ্ড
দেশপ্রেমিক কৃষক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রিয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকে তারা আমানত রেখে এতদিন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভবিষ্যতেও এই ব্যাংকের আমানত নিরাপদে থাকবে, এ প্রত্যাশা সব গ্রাহকের। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও তাদের গ্রাহকসেবা ও গ্রাহকের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমানতগুলো সঠিকভাবে সঠিক স্থানে বিনিয়োগ করে সুদমুক্ত মুনাফা উপহার দেবে প্রত্যাশা সবার।
সোর্স: শেয়ার বিজ।
One Comment