সঞ্চয়পত্র ও প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগসীমা কমলো

বিনিয়োগ সীমা কমানো হলো সরকারি খাতের তিন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও প্রবাসী বন্ডে। বড় গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করতেই এ বিনিয়োগসীমা কমানো হয়। এখন থেকে সরকারি খাতের তিনটি সঞ্চয়পত্রে সমন্বিতভাবে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। একই সাথে প্রবাসী বন্ডে ১০ লাখ ডলার বা আট কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করে সরকারের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি মর্যাদা পাওয়ার বিধানটিও বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এসব নির্দেশনা ৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি দেরিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে পৌঁছানোর কারণে ৩ ডিসেম্বরের বা এর পরে ওই সীমার চেয়ে বেশি কোনো সঞ্চয়পত্র বা বন্ড বিক্রি হয়ে থাকলে সেগুলোকে সমন্বয় করতে হবে। তবে ৩ ডিসেম্বরের আগে যেসব সঞ্চয়পত্র বা বন্ড বিক্রি হয়েছে সেগুলো প্রচলিত নিয়মে নির্ধারিত মেয়াদ পূর্তিতে ভাঙ্গানো যাবে। মেয়াদ শেষে পুনরায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মে করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সঞ্চয়পত্র ও প্রবাসী বন্ড চালু করা হয়েছে ক্ষুদ্র, স্বল্প মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য। এই সীমার মধ্যে এসব শ্রেণীর মানুষ সঞ্চয়পত্র বা বন্ড কিনতে পারবেন। কিন্তু ধনাঢ্য ব্যক্তিরা শিল্প খাতে পুঁজি বিনিয়োগ না করে সঞ্চয়পত্র বা বন্ডে নিরাপদ বিনিয়োগ করছেন। এতে একদিকে শিল্প খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্য দিকে কর্মসংস্থান বাড়ার গতি কমে গেছে। এ কারণে সীমা কমানোর মাধ্যমে এ খাতে বড় বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকারি খাতে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অধীনে বর্তমানে চারটি সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো হচ্ছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে আগের নিয়মে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে ৬০ টাকা বিনিয়োগ করা যেত। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে একক নামে ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যেত। এ সঞ্চয়পত্র যৌথ নামে আগেও কেনা যেত না, এখনো কেনা যাবে না। এটি শুধু নারীরা কিনতে পারেন। একজন গ্রাহক আগে এ তিনটি সঞ্চয়পত্রেই বিনিয়োগ করতে পারতেন। তিনটি মিলে আগে একক নামে একজন গ্রাহক ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারতেন। এখন তিনটি মিলে পারবেন ৫০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সীমা কমেছে ৫৫ লাখ টাকা। যৌথ নামে দু’টি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। এতে মোট বিনিয়োগ করতে পারবেন ১ কোটি টাকা। আগে কেনা যেত ১ কোটি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সীমা কমেছে ২০ লাখ টাকা।
আলোচ্য তিনটি সঞ্চয়পত্র থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রটি বাইরে রাখা হয়েছে। এটির ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মকানুনও অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ আগের মতো এখনো এটি একক নামে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। যৌথ নামে এটি আগেও কেনা যেত না, এখনো কেনা যাবে না। কেবল পেনশনের অর্থ দিয়েই এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। তিনটি সঞ্চয়পত্রের মোট বিনিয়োগ সীমার বাইরে থাকবে এটির বিনিয়োগ।
কেবল দু’টি সঞ্চয়পত্রে প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারে। অন্য দু’টিতে পারে না। এর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্থ ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে কেবল প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে। এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারবে না। তবে ব্যক্তি বিনিয়োগ সব সঞ্চয়পত্রেই উন্মুক্ত।
এ দিকে প্রবাসীদের জন্য সরকারের তিনটি বন্ড রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। এই তিনটি বন্ড আগে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের অর্থ দিয়ে কিনতে পারতেন যত খুশি তত। কোনো সীমা ছিল না। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে এ তিনটি বন্ডের বিপরীতে সমন্বিতভাবে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার বন্ড কেনা যাবে। এর বেশি কেনা যাবে না।
আগের নিয়মে কোনো প্রবাসী ১০ লাখ ডলার বা আট কোটি টাকার সমপরিমাণ বন্ড কিনলে তাকে সিআইপি মর্যাদা দেয়া হতো। এখন যেহেতু এক কোটি টাকার বেশি কেনা যাবে না, সে কারণে তাদের সিআইপি মর্যাদা দেয়ার বিধানটিও বাতিল করা হয়েছে।
এখন থেকে গ্রাহকদের ওইসব সঞ্চয়পত্র বা বন্ড কেনার আগে এই মর্মে ঘোষণা দিতে হবে যে আলোচ্য ঊর্ধ্বসীমার বেশি বিনিয়োগ নেই। যদি বাড়তি বিনিয়োগ পাওয়া যায় তবে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।