অনলাইনে আর্থিক লেনদেনে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সতর্কতা জরুরী

অনলাইনে আর্থিক লেনদেন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হবেই না-ই বা কেন, ঘরে বসেই যদি পছন্দসই পণ্য কেনা যায় অথবা লম্বা লাইনে না দাঁড়িয়ে ভ্রমণ বা সিনেমার টিকিট কেনা যায় তাহলে কে যায় বাইরে বেরোনোর হ্যাপা পোহাতে! একারণেই অনলাইনে শপিং, টিকিট বুকিং, বিদ্যুৎ/গ্যাস এর বকেয়া বিল পরিশোধ সেবাগুলোর বিস্তৃতিও বাড়ছে।

বাংলাদেশ সরকারও ই-কমার্স ব্যবস্থার প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। ই-কমার্স এর অধিকাংশ লেনদেনের মাধ্যমই হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড অথবা ডেবিট কার্ড। সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে এসব লেনদেনের। যেহেতু ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডগুলো আপনার গোপনীয় তথ্য সংরক্ষণ করে তাই হ্যাকিং এর শিকার হলে এসব তথ্য চুরি যাবার ভয় থাকে। এছাড়াও থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট এবং কুকিজগুলো সক্রিয়ভাবে তথ্য চুরি করে আপনার নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন থাকলে এই ধরনের প্রতারণামূলক লেনদেনের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।

১. লেটেস্ট অ্যান্টিভাইরাস /সিকিউরিটি সফটওয়্যার ইনস্টল করুনঃ

টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ টেকনো ইনফো বিডি এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

জানেনই তো, প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর। সমস্ত অনলাইন লেনদেনের জন্যও এ প্রবাদ সত্য। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ম্যালওয়্যার, স্প্যাম এবং স্পাইওয়্যার দ্বারা পূর্ণ ওয়েব এড়াতে সর্বোত্তম সুরক্ষা হল ভাল অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা। ফিশিং, ম্যালওয়্যার এবং ট্রোজান থেকে রক্ষা করতে পারে এমন অ্যান্টিভাইরাস ছাড়াও ইন্টারনেট সিকিউরিটির জন্য বিশেষায়িত সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। ট্রায়াল ভার্শন ব্যবহার না করে ফুল ভার্শন ব্যবহার করাই উত্তম।

২. নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন:

ইন্সটলড সিকিউরিটি সফটওয়্যারগুলো নিয়মিত আপডেট করুন। সর্বাধিক হ্যাক করা সফটওয়্যারটিকে ওয়েব মেল ক্লায়েন্ট এবং ওয়েব ব্রাউজারগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। নিশ্চিত করুন যে আপনি সর্বদা আপনার ব্রাউজারের সর্বশেষ সংস্করণ এবং মেল ক্লায়েন্টগুলো যেমন থান্ডারবার্ড এবং ফায়ারফক্সে আপডেট করেছেন। ওয়েব ব্রাউজার কোম্পানি সফটওয়্যারের মধ্যে যেকোন ধরনের নিরাপত্তা সমস্যা দেখাতে নিয়মিত আপডেট হিসাবে প্যাঁচ (Patch) রিলিজ করে।

আপনি যদি সফটওয়্যারটি ম্যানুয়ালভাবে টেস্ট বা আপডেট না করতে পারেন, তবে আপনার কম্পিউটারে সমস্ত সফটওয়্যারের জন্য অটো আপডেট অপশন চালু রাখা সবচেয়ে ভাল উপায়।

৩. এনক্রিপশন লক্ষ্য করুনঃ

কোনো ওয়েবপেইজে কোন গোপনীয় তথ্য বা সংবেদনশীল তথ্য প্রবেশ করার আগে, ওয়েবসাইটটি সঠিক এনক্রিপশন ব্যবহার করে কিনা তা পরীক্ষা করুন। এনক্রিপশন একটি নিরাপত্তা পরিমাপ যা ইন্টারনেটের বিভিন্ন নেটওয়ার্কে সার্ফিংয়ের সময় তথ্য সংরক্ষণে সহায়তা করে। এনক্রিপশনের মূল দিকটি হল একটি ইন্টারনেট প্রোটোকল বা ইউআরএল ঠিকানা যার শুরু https (স্ট্রিং বা নিরাপত্তা) দিয়ে এবং যা স্ক্রিনের ডান কোণে একটি ক্লোজড প্যাডলক শো করে।

৪. অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুনঃ

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে অধিকাংশ লোকই লেনদেনের সুবিধার জন্য নেট ব্যাংকিং এবং ক্রেডিট কার্ডসহ সংবেদনশীল লেনদেনের জন্য কমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। আপনিও যদি এ কাজ করে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন আপনি বড় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন। হ্যাকাররা কোন ভাবে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট এক্সেস করতে পারলেই বাকি গুলোতেও খুব সহজে এক্সেস নিতে পারবে। তখন আপনার বারোটা বাজতে খুব বেশি সময় লাগবে না। একারণে ভার্চুয়াল জগতে নিজেকে নিরাপদ রাখার সেরা উপায় হল বিভিন্ন লেনদেনের জন্য অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড অপশন থাকলে তা ইনেবল করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

৫. ক্যাশ অন ডেলিভারি নিনঃ

অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে কোন কোন সাইট ক্যাশ অন ডেলিভারি সেবা প্রদান করে। বাস্তব সম্মত হলে এটি ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না।

৬. অফার যাচাই করুনঃ

আপনি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বিভিন্ন প্রচারমূলক মেইল ​​এবং কুপন অনেক পেয়ে থাকতে পারে। যেগুলোর সাথে আবার আকর্ষণীয় অফারও থাকে। এসব ক্ষেত্রে দেখতে হবে লিংকে ক্লিক করলে কোন থার্ড পার্টি সাইটে নিয়ে যায় কিনা। যদি না নিয়ে সরাসরি নিজেদের সাইটে নেয় তো ভাল। তারপরও তথ্য দেয়ার সময় ওয়েব ইউআরএল ভালভাবে চেক করে দেখা দরকার।

৭. পাবলিক কম্পিউটারকে না বলুনঃ

ইন্টারনেটে কোনও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য সর্বদা ফোন বা ট্যাব এর মত ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার করুন। এই ধরনের সংবেদনশীল লেনদেনের জন্য কোনো পাবলিক কম্পিউটার বা আপনার বন্ধুর মোবাইল ব্যবহার করবেন না। এছাড়া সর্বদা সুরক্ষিত একটি নিরাপদ Wi-Fi সংযোগ ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করুন।

৮. ব্রান্ড-কে প্রাধান্য দিনঃ

ব্রান্ডেড বা বিখ্যাত কমার্সিয়াল ওয়েবসাইট এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ়। এসকল সাইটে মোটামুটি নিশ্চিন্তে অনলাইন লেনদেন করা যায়। এছাড়া এদের প্রতিটি লেনদেনের জন্য ই-মেইল বা টেক্সট কনফার্মেশনের ব্যবস্থাও থাকে যা অযাচিত কার্ড ব্যবহার রোধ করে।

অনলাইনে আর্থিক লেনদেনে উপরের টিপসগুলো অনুসরণ এর মাধ্যমে আপনার অনলাইনে আর্থিক লেনদেন নিরাপদ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply