হেডফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলি অবশ্যই লক্ষণীয়

টিআইবিঃ আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি ভালো। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। দৈনন্দিন জীবনে এই পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যেমন বিনোদন উপভোগ করি তেমনি আমাদের কাজের একঘেয়েমি ভাবকেও দূরে ঠেলে দিতে পারি। প্রযুক্তির যে সব পণ্য আমরা ব্যবহার করি তার মধ্যে খুব পরিচিত একটি হলো হেডফোন। এক কথায় বলতে পারি, আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে এই সব হেডফোন।
হেডফোন শুধু গান শোনার কাজেই লাগে না। গান শোনা ছাড়াও অনেক কাজে এর ব্যবহার হয়। যেমন- কলসেন্টার, এডিটিং, লাইভ চ্যাটিং, মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ গেমাররাও হেডফোন ব্যবহার করে। এখন একটা ফোন কিনলে তার সাথে হেডফোন বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। তবে সেগুলো দেখতে চটকদার হলেও আমাদের কানের স্বাস্থ্যের জন্যে ততটা ভালো হয় না। ফলে দরকার পড়ে নতুন ও মানসম্মত একটি হেডফোন কেনার।
হেডফোন কেনার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষনীয়-
টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। |
- প্রথমত হেডফোনটি দেখতে ভালো কিনা?
- দ্বিতীয়ত দামটা নাগালের ভেতরে কিনা?
- তৃতীয়ত ভালো ব্র্যান্ডের কিনা?
কিন্তু এই তিনটি ব্যাপারই একটি হেডফোনকে বাছাই করার জন্যে পর্যাপ্ত নয়। তাই সঠিক হেডফোন কেনার জন্য হেডফোন বাছাইয়ের সময় মনে রাখুন নীচের বিষয় গুলো।
যে ধরনের হেডফোন আপনি ব্যবহার করতে পারেনঃ
অনেক ধরনের হেডফোন বাজারে পাওয়া যায়। আপনি কোনটা কিনবেন তা আপনাকে আগে থেকেই নির্ধারণ করতে হবে। আপনাদের সুবিধার জন্য কয়েকটি ক্যাটাগরির কথা এখানে উল্লেখ করা হলো-
নয়েজ ক্লিনিং হেডফোনঃ
আপনি যদি লম্বা সময় ধরে হেডফোন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এই ধরনের হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি যারা ভিডিও বা অডিও নিয়ে কাজ করে থাকেন তাদের জন্য এই ধরণের হেডফোন কাজে আসতে পারে। এটি এমনকি বাইরে থেকে আসা শব্দও প্রতিরোধ করতে পারে।
ইন এয়ার অ্যান্ড ওভার ইয়ারঃ
ইন ইয়ার হেডফোনের সাউন্ড ডাইসগুলো আপনার কানের উপর থাকে তাই লম্বা সময় ধরে ব্যবহার করলে আপনার কানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। যদিও অনেকই এই হেডফোনগুলো সাচ্ছন্দে ব্যবহার করেন। আর ওভার ইয়ার হেডফোনগুলোর সাউন্ড ডাইস পুরো কান ডেকে ফেলে। তাই আপনি চাইলে এই হেডফোনগুলো ব্যবহার করতে পারেন
ব্লুটুথ হেডফোনঃ
ওয়্যারলেস হেডফোনের স্বাধীনতার স্বাদ আরও বড়িয়ে দিতে আছে ব্লুটুথ হেডফোন। এটি ব্যবহার করতে পারবেন মোবাইল, ডেস্কটপ ও ল্যাপটপের সাথে। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে এই হেডফোনগুলো যেহেতু তারবিহীন, তাই এই হেডফোনগুলোতে ব্যাটারি লাগানো থাকে। ফলে ব্যাটারির চার্জ, ওজন ও আকারের দিকে লক্ষ্য রেখে কিনবেন।
ইয়ার হেডফোনঃ
এই ধরণের হেডফোনগুলো আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে থাকি মোবাইল ও বিভিন্ন ডিভাইসের সাথে। যদি আলাদা কিনতে হয় তা হলে যাচাই করে দেখুন ইয়ার হেডফোনটি কতটুকু ব্যবহার উপযোগী। যেহেতু আপনি অধিকাংশ সময় এই ধরনের হেডফোন ব্যবহার করে থাকেন তাই একটু দাম দিয়ে ব্র্যান্ডেরটা কেনার চেষ্টা করবেন।
একটি ভালো হেডফোনের বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
ম্যাগনেট থেকে শুরু করে ওয়্যারলেস টেকনোলজি পর্যন্ত হেডফোনের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একটি ভালো হেডফোনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এগুলো জেনে রাখতে পারেন।
Acoustic System:
এয়ারফোনের ক্ষেত্রে Acoustic বলতে এয়ারফোনের ডিজাইনকে উল্লেখ করে। একটি বদ্ধ Acoustic সিস্টেম বাইরের শব্দকে ভিতরে আসা প্রতিরোধ করতে সক্ষম যেমন: Sony MDR-ZX110AP। তবে কিছু খোলা Acoustic সিস্টেম রয়েছে যার ফলে বাইরের শব্দও শোনা যায় যেমন: Philips SHP9500।তবে অনেক সময় বদ্ধ বা Closed Acoustic সিস্টেমও শতভাগ নয়েজপ্রুপ হয়না। কেবল মাত্র ভালো ফিট Acoustic হেডফোন সফলভাবে নয়েজ ১০০% বন্ধ করতে সক্ষম।
Frequency Response:
ফ্রিকুয়েন্সী রেসপন্স বলতে বুজাচ্ছে যে, এয়ারফোনটি কত ফ্রিকুয়েন্সী রেঞ্জ কভার করতে পারে। যত ভালো ফ্রিকুয়েন্সী রেঞ্জ কভার করতে পারবে,তত ভালো সাউন্ড। যেমন : Audio-Technica SPORT2BK যেটি 15-24,000 Hz ফ্রিকুয়েন্সী রেঞ্জসম্পন্ন তার থেকে Sony MD-RXB50AP এর ফ্রিকুয়েন্সী রেঞ্জ বেশী;তাই এর সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো।
Impedance:
এখানে Impedance বলতে বোঝানো হয়, ইলেকট্রিক সার্কিট এর রেজিস্টেন্স এর তড়িত সিগনাল। বেশি Impedance এর মানে কম ইলেকট্রিক সিগনাল এবং কম সাউন্ড কোয়ালিটি। তাই ভালো ভালো হেডফোনে এই Impedance এর মাত্রা কম করে থাকে। যেমন : Philips SHP2600/27।
ম্যাগনেট:
অনেক সময় আমরা এই ম্যাগনেটের ওপর নজর দেই না। হেডফোন প্রধানত দুই রকমের ম্যাগনেট দিয়ে তৈরিযথা : Neodymium এবং Ferrite। Sony MDR-ZX300AP/B এ Neodynium এবং Sony MDR-V150 এ Ferrite মডেলে এ বিদ্যামান। মর্ডান সবকিছুতে Neodymium ব্যবহার করা হয় এবং Ferrite এর চাইতে শক্তিসালীও বটে। এই ম্যাগনেট প্রোডাকশন কস্ট বাড়াতে পারে; তবে বেশি চিন্তা না করলেও হবে।
সেন্সিটিভিটি:
হেডফোন এই সেন্সিটিভিটি dB/mW এককে পরিমাপ করা হয়। এর মানে ১ মিলিওয়াট ইলেকট্রিক্যাল সিংনালে কতটুকু সাউন্ড হেডফোনটি তৈরি করতে পারে। এই সেন্সিটিভিটি এর মান ৮০-১১০ dB এর ভেতর হলে ভালো।
Diapharagm:
Diapharagm এটি হল হেডফোন এর ভেতরকার মেমব্রেন যা কাপে এবং শব্দ উৎপাদন করে। ডোম, কোন, হর্ন বিভিন্ন আকৃতির Diapharagm তৈরি হয়ে থাকে। এই Diapharagm এ যত ভালো ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয় সাউন্ড কোয়ালিটি তত ভালো হয়। তাই Diapharagm এর ব্যাপারটি অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
Voice Coil:
হেডফোন এর ম্যাগনেট এর সাথে যে কয়েল ব্যবহার করা হয়, তাকে ভয়েস কয়েল বলা হয়। এই কয়েল বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল এর তৈরি। যেমম: কপার,অ্যালুমিনিয়াম, কপার-ক্ল্যাড অ্যালুমিনিয়াম। অ্যালুমিনিয়াম কপার এর সাউন্ড খুবই সেন্সিটিভ হয়; তবে কপার কয়েল এর মত অত টেকসই হয়না। তাই বর্তমানে ভালো হেডফোনে কপার-ক্ল্যাড অ্যালুমিমিয়াম কয়েল বা CCAW ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
Wireless Technology:
বাংলাদেশে মূলত বর্তমানে যে ওয়্যারলেস টেকনোলজি এর হেডফোন বানিজ্যিকভাবে সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে; সেটি হল ব্লুটুথ হেডফোন। ব্লুটুথ হেডফোন যেকোন ব্লটুথ মিডিয়া ডিভাইস এর সাথে সহজেই কানেক্ট করা যায়। ১০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত রেঞ্জ পাওয়া যায়। এই ব্লুটুথ সবচাইতে সুরক্ষিত একটি ওয়্যারলেস টেকনোলজি।
আরেকটি যে টেকনোলজি এর হেডফোন পাওয়া যায় তা হল NFC। তবে বাংলাদেশে একদম কম। যেকোন NFC ওয়ালা ফোন যেমন : আইফোন ৬/৭, গ্যালাক্সি এস ৭/৮ এর সাথে খুব সহজেই একটি ট্যাপ এর মাধ্যমে কানেক্ট করা যায়।
Noise Cancellation:
এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি সুবিধা। এর মাধ্যমে বাইরের অবান্তর শব্দ কানে ঢুকতে পারে না। ভালো ভালো প্রায় সব হেডফোনেই এই সুবিধা মেলে।
শেষকথা যোগাযোগ বা কমিউনিকেটিং এর জন্য তারওয়ালা এয়ারবাডস, স্পোর্টস বা এরকম আউটসাইড ব্যবহারের জন্য ওয়্যারলেস এয়ারবাডস, তারওয়ালা হেডফোন কম্পিউটারে অনেকক্ষন ব্যবহারের জন্য, ওয়্যারলেস হেডফোন ব্যবহার করবেন অনেকক্ষন ল্যাপটপে কাজ করার জন্য। সর্বোপরি হেডফোন কেনার আগে উপরের বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন