ব্যাংকিং ডিপ্লোমা কতটা জরুরি!
লেখকঃ মুহাম্মদ একরামুল হক, এফএভিপি, শাখা প্রধান, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

ব্যাংকিং সেক্টরে বর্তমানে খুবই আলোচিত একটি বিষয় ডিপ্লোমা। কভিড-পরবর্তীতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতি যখন টালমাটাল এবং তার সঙ্গে দেশে ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে ক্রমাগত গুজব চলছে, তখনই ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি নতুন নির্দেশনা জারি করল। ডুবে যাওয়ার উপক্রম প্রায় ব্যাংকিং সেক্টরকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখব সে চিন্তা বাদ দিয়ে ডিপ্লোমা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় পড়ে আছি। ডিপ্লোমাধারীরা এই পরিপত্রের পক্ষে এবং যাদের ডিপ্লোমা নেই তারা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটা শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কে সীমাবদ্ধ নয়। কর্মক্ষেত্রে ও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এই সংকটময় মুহূর্ত পরিপত্রটি কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল? যখন দেশব্যাপী গুজব ও বিশ্ব অর্থনীতির কারণে ডলার সংকট চলছে। এ মুহূর্তে প্রতিটি ব্যাংক লড়াই করছে এসব সংকটকে কাটিয়ে ওঠার জন্য। এমন সময়ে পরিপত্রটি ব্যাংকারদের মনোবল নষ্ট করবে বলে মনে করি। বেশিরভাগই এ ধারণা পোষণ করেন। কারণ ডিপ্লোমাধারী ব্যাংকার এখনও সংখ্যায় কম।
যেকোনো পেশায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানের পাশাপাশি তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু এ জ্ঞান শুধু ডিপ্লোমা করলেই যে অর্জিত হবে এই ধারণার সঙ্গে অনেকেই একমত নন। তাই এই পরিপত্রে ব্যাংকারদের পদোন্নতিতে ডিপ্লোমাকে বাধ্যতামূলক করা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। অনেক ডিপ্লোমাধারী এমন কথায় নাখোশ হতে পারেন। ডিপ্লোমাকে পদোন্নতির জন্য সহায়ক করা যেতে পারে।
টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ টেকনো ইনফো বিডি এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। |
বাংলাদেশ ব্যাংক ডিপ্লোমার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বলেছে, অধিকতর জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে ডিপ্লোমা পাস করতেই হবে এবং অনেকেই অনেক পেশার বিভিন্ন ডিগ্রি নেয়ার উদাহরণও দিচ্ছেন। তাদের উদ্দেশে বলা যায়, ব্যাংকিং পেশার মতো মানসিকচাপ-সংবলিত একটি পেশায় থেকে অধিকতর জ্ঞান অর্জন হয়তো সবার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। একজন পেরেছেন বলে সবাইকে পারতে হবে; এটা ভাবা ঠিক নয়। এখানেও সবাই গ্র্যাজুয়েশন বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে আসে (হয়তো কিছু সংখ্যক রেফারেন্স বা অন্য উপায়ে)। তাদের আমরা যে ডিপ্লোমাটা বাধ্যতামূলক করছি তার মান কোন পর্যায়ের এটাও একটু ভেবে দেখা দরকার। একজন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর করা ব্যক্তির জন্য এরচেয়ে কম মানের ডিপ্লোমা অর্জন বাধ্যতামূলক করা দৃষ্টিকটুও বটে। ডিপ্লোমাধারীদের কেউ বলতে পারেন, ‘পাস করে দেখান না!’ এখানে পাস করে না দেখালেও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করা লোকটির আত্মসম্মান বলেও তো একটি বিষয় আছে। তাই এই ডিপ্লোমাকে বাধ্যবাধকতা না করে আরও অধিকতর জ্ঞানী ব্যাংকার সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে পিএইচডি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হোক এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেন সুযোগ-সুবিধা দেয়, সে নির্দেশনা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। (অন্যান্য পেশায় যেমন হয়ে থাকে। অধিকতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ছুটি ও বেতনভাতা দিয়ে থাকে।)
আরও দেখুন:
– পদোন্নতিতে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক চায় না ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন
– কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করলো বাংলাদেশ ব্যাংক
– ব্যাংকিং ডিপ্লোমার আধুনিকায়ন জরুরি
ডিপ্লোমা পরীক্ষা পদ্ধতি ও খাতা মূল্যায়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। যারা পাস করেছে তারা দাবি করছে সব ঠিক আছে। যারা বারবার পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেননি; তারা বলছে, ঠিক নেই। ঠিক দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার মতো! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কমেন্ট-পোস্ট পড়ে যা বুঝলাম, কিছুটা ঘাপলা আছে। তাই এই ডিপ্লোমাকে বাধ্যতামূলক করার আগে এর মূল্যায়ন পদ্ধতি ও পাস মার্কের বিষয়গুলোরও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। দেশের পাবলিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোতে যেখানে পাসের হার ৮০ শতাংশের ওপরে সেখানে, এ ডিপ্লোমা পরীক্ষায় পাসের হার মাত্র ৫-৬ শতাংশ। তাহলে কি আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো মান নেই? নাকি এই ডিপ্লোমা পরীক্ষার মূল্যায়নে কোনো সমস্যা আছে তাও ভেবে দেখা উচিত।
প্রথম প্রকাশ: শেয়ার বিজ।