শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ কেনার গাইডলাইন ২০১৯

টিআইবিঃ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দরকারি বিভিন্ন বইপত্র থেকে শুরু করে বিনোদনের জন্যও ল্যাপটপের জুড়ি নেই। তাছাড়া ল্যাপটপ থাকার ফলে সহজেই একজন শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তার সাথে নিয়ে ঘুরতে পারছে। ল্যাপটপে এমন অনেক ধরণের সুবিধা আছে যা একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার বা স্মার্টফোন থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।

কিন্তু বাজারে বিভিন্ন সাইজ, কনফিগারেশন এবং দামের হাজার হাজার ল্যাপটপ রয়েছে। এসব ল্যাপটপ থেকে একজন শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত ল্যাপটপ বাছাই করা খুবই জটিল একটি কাজ। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, অনেক ভালো কনফিগারেশনের ল্যাপটপ কেনার পরেও তা বেশিদিন টেকসই হয় না। আর এসব সমস্যার কারণে সঠিক ল্যাপটপ বাছাই করাটা মাঝে মাঝে খুবই দুষ্কর হয়ে উঠে।

চলুন আজকে জানা যাক, শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ কেনার গাইডলাইন ২০১৯।

টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

১। প্লাটফর্ম বাছাই করুন: ম্যাক, উইন্ডোজ নাকি ক্রোম ওএস?

অনেকেই ভেবে থাকেন যে, প্লাটফর্ম বাছাই করা অনেক সহজ একটা কাজ। কিন্তু আপনি যদি সবগুলো অপারেটিং সিস্টেমের উপকারী ও অপকারী দিক সম্পর্কে অবগত না হোন, তাহলে ল্যাপটপের স্থায়িত্ব নিয়ে আপনাকে সমস্যায় পড়তেই হবে। বেশিরভাগ ল্যাপটপেই এই তিনটি অপারেটিং সিস্টেম (উইন্ডোজ, ম্যাক ও ক্রোম ওএস) ইন্সটল করা থাকে। মনে রাখবেন, ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম যে ল্যাপটপের ইন্সটল করা থাকে সেটাকে ম্যাকবুক বলা হয়।

ক। উইন্ডোজ: ক্রোম ওএস ও ম্যাকের চেয়ে, উইন্ডোজের ফ্লেক্সিবিলিটি তূলনামূলকভাবে বেশি। উইন্ডোজের নোটবুক বা ল্যাপটপের দাম ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্তও হয়ে থাকে। উইন্ডোজের ল্যাপটপগুলোতে বেশ ভালো মানের বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা থাকে, যেমন: টাচ স্ক্রিন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার, ডুয়াল গ্রাফিক্স চিপ ইত্যাদি। উইন্ডোজ ১০ মূলত, উইন্ডোজ ৭ ও উইন্ডোজ ৮ এর থেকে আপগ্রেডেড ও অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল। উইন্ডোজে অন্যান্য অপশনের পাশাপাশি লাইভ ডিজিটাল অ্যাসিস্টেন্ট কর্টানা পাওয়া যায়।

খ। ম্যাক: প্রত্যেকটি ম্যাকবুকেই অ্যাপলের লেটেস্ট ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম ‘ম্যাক ওএস হাই সিয়েরা’ ইন্সটল করা থাকে। যদিও ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের কাজ প্রায়ই উইন্ডোজের মতোই, কিন্তু এর ইন্টারফেস উইন্ডোজের থেকে আলাদা। উইন্ডোজের স্টার্ট মেন্যুর বদলে এখানে পাবেন স্টার্ট ডক। আর ডিজিটাল অ্যাসিস্টেন্ট কর্টানার বদলে থাকে সিরি। যদিও ম্যাকবুক কখনোই টাচ স্ক্রিন হয় না।

গ। ক্রোম ওএস: গুগলের এই অপারেটিং সিস্টেম ক্রোম ওএসের ফিচার, উইন্ডোজ ও ম্যাকের থেকে অনেক কম। স্টার্ট মেন্যু থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই উইন্ডোজের মতো দেখতে হলেও, বেশিরভাগ অ্যাপ্লিকেশনই গুগলের এবং সেগুলো প্রায় সময়েই অফলাইনে কাজ করে না। যদিও ক্রোমবুক মূলত দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির জন্য খুবই ভালো।

২। ল্যাপটপের সঠিক সাইজ বাছাই করুনঃ

যেকোনো ল্যাপটপ বা নোটবুকের স্পেসিফিকেশন বা দাম জানার আগে আপনাকে সেই ল্যাপটপের পোর্টেবল ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হবে। একটি ল্যাপটপের পোর্টেবল ক্ষমতা মূলত ল্যাপটপের ডিসপ্লে সাইজের উপর নির্ভর করে।

ক। ১১ থেকে ১২ ইঞ্চি: এই ধরণের ল্যাপটপ ওজনে খুবই পাতলা ও আকারে অনেক ছোট হয়ে থাকে। এদের ডিসপ্লের সাইজ ১১ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে হয়ে থাকে এবং এদের ওজন ২.৫ পাউন্ড থেকে ৩.৫ পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে।

খ। ১৩ থেকে ১৪ ইঞ্চি: এই ধরণের ল্যাপটপের পোর্টেবল ক্ষমতা ও ইউজেবিলিটি অন্যান্য যেকোনো সাইজের ল্যাপটপের থেকে বেশি। এই ধরণের ল্যাপটপের ওজন ৪ পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে।

গ। ১৫ ইঞ্চি: এই ধরণের ল্যাপটপই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এই ধরণের ল্যাপটপের ওজন ৪.৫ পাউন্ড থেকে ৬.৫ পাউন্ডের মধ্যে হয়ে থাকে। এই ধরণের ল্যাপটপের পোর্টেবল ক্ষমতা অন্যান্য সাইজ থেকে একটু কম।

ঘ। ১৭ থেকে ১৮ ইঞ্চি: যদি আপনার ল্যাপটপটিকে ডেস্কটপের মতো ব্যবহার করতে চান ও ইমার্জেন্সি সময়ে এটাকে বহন করতে চান, তাহলে আপনার এই ধরণের ল্যাপটপ কেনাটাই উচিৎ। এই ধরণের ল্যাপটপের ওজন ৭ পাউন্ডের বেশি হয়ে থাকে। তবে এই ধরণের ল্যাপটপে হাই এন্ড গেইমিং করাটাও সম্ভব হয়।

৩। কিবোর্ড ও টাচপ্যাড পরীক্ষা করে দেখুনঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ল্যাপটপের কিবোর্ডে বা টাচপ্যাডেও সমস্যা দেখা দিতে পারে আর একবার ল্যাপটপের কিবোর্ডে সমস্যা ধরা পড়লে পড়ে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায় নেই। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কিবোর্ডটিকে পরিবর্তন করতে হয়। যদি আপনি টাইপিংয়ের দিকে নজর দিয়ে থাকেন, তাহলে কিবোর্ড ও টাচপ্যাড ভালো করে পরীক্ষা করে দেখবেন। কিবোর্ডের প্রত্যেকটি অংশ ও কি যাতে ভালোভাবে কাজ করে ও ল্যাগিং না করে, সেদিকে খেয়াল করে দেখবেন।

টাচপ্যাডের ক্ষেত্রে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখবেন যে, কার্সরের স্পিডে কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকি কিংবা কার্সর সাধারণ অবস্থায় নড়াচড়া করছে নাকি। বিশেষ করে আপনি যদি এই ল্যাপটপে গেইমিং করতে চান তাহলে বাম দিকের কি-গুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না সেটা দেখবেন আর আপনি যদি প্রোগ্রামিং বা টাইপিংয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকেন, তাহলে মাঝখানের দিকের কি-গুলো কাজ করছে কি না সেটা ভালো মতো দেখে নিবেন।

৪। ল্যাপটপের প্রসেসর কেমন হওয়া উচিৎঃ

একটি ল্যাপটপের দক্ষতা নির্ধারণে প্রসেসরের ভূমিকা অনেক বেশি। কারণ, প্রসেসরকে কম্পিউটারের ব্রেইন বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনার কাজের উপর নির্ভর করবে যে, আসলে আপনার কোন প্রসেসরের ল্যাপটপ কেনা উচিত।

ক। ইন্টেল কোর আই ফাইভ: যদি আপনি অসাধারন দক্ষতা ও দ্রুততার সাথে দামের কম্বিনেশনে একটি ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে ইন্টেল কোর আই ফাইভ প্রসেসর আপনার জন্যই। যেসব প্রসেসরের মডেলের শেষের অক্ষর ইউ (U) হয়ে থাকে (যেমনঃ Core i5 – 7200U), সেগুলো সহজেই কিনতে পাওয়া যায় এবং দক্ষতার দিক থেকেও এগুলো অন্যান্য মডেল থেকে বেশ ভালো।

অন্যদিকে কোর আই ফাইভের অন্য ধরণের মডেল রয়েছে যেগুলোর শেষের অক্ষর ওয়াই (Y) হয়ে থাকে, সেগুলো কেনা উচিত নয়। কারণ, কোর আই ফাইভের মডেল হওয়া সত্ত্বেও এগুলোর দক্ষতা ততটা ভালো নয়।

খ। ইন্টেল কোর আই সেভেন: এই ধরণের প্রসেসর মূলত কোর আই ফাইভের আপগ্রেডেড ভার্সন ও কোর আই ফাইভ থেকে এগুলো তূলনামূলকভাবে বেশি দক্ষতার হয়ে থাকে একইসাথে এগুলোর দামও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হয়ে থাকে। কোর আই সেভেনে মূলত চারটি কোর থাকে যা আপনার ল্যাপটপকে গেইমিং ও হাই এন্ড গ্রাফিক্সের কাজের জন্য তৈরি করে রাখে।

গ। এএমডি রাইজেন মোবাইল: এই ধরণের প্রসেসর মূলত কোর আই ফাইভ ও কোর আই সেভেনের সাথে প্রতিযোগীতার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

৫। ল্যাপটপের র‍্যাম কেমন হওয়া উচিৎঃ

যদিও বেশ কিছু ল্যাপটপে ২ জিবি র‍্যাম থাকে, কিন্তু আমরা রেকমেন্ড করবো অন্তত ৪ জিবি র‍্যামের ল্যাপটপ কেনার জন্য। আর যদি বাজেটের দিকে কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে ৮ জিবি র‍্যাম নেয়া উচিৎ। আপনার প্রসেসর যদি কোর আই থ্রি বা কোর আই ফাইভ হয়ে থাকে তাহলে র‍্যাম নেয়া উচিৎ কমপক্ষে ৪ জিবি এবং আপনার ল্যাপটপের প্রসেসর যদি কোর আই ফাইভ এইট জেনারেশন বা কোর আই সেভেন হয়ে থাকে তাহলে র‍্যাম নেয়া উচিত কমপক্ষে ৮ জিবি বা ১৬ জিবি।

৬। ল্যাপটপের স্টোরেজ ডিভাইস কেমন হওয়া উচিৎঃ

সিপিইউ এর স্পিড বাড়ানোর জন্য ল্যাপটপের স্টোরেজ ডিভাইস বা হার্ড ড্রাইভের গুরুত্ব অনেক বেশি। যদি আপনার খুব বেশি জায়গার দরকার না হয় কিন্তু তারপরেও আপনার বাজেট বেশ ভালো অবস্থানে থাকে, তাহলে হার্ড ড্রাইভের বদলে সলিড স্টেট স্টোরেজ বা এসএসডি কিনতে পারেন। কারণ, এসএসডি আপনার ল্যাপটপের স্পিড ও দক্ষতা প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে দেবে।

কিন্তু যদি আপনার খুব বেশি জায়গার দরকার পড়ে, তাহলে হার্ড ড্রাইভ ক্রয় করা উচিৎ। কারণ, ২ টেরাবাইট হার্ড ড্রাইভের দাম, ১০০ জিবি এসএসডির থেকে অনেক কম। তাই, সেদিকে খেয়াল রেখে তারপরে স্টোরেজ ডিভাইস বাছাই করুন।

Leave a Reply

Back to top button