ফরেক্স ব্যবসা যেভাবে অগ্রসর হবেনঃ পর্ব-৭ ফরেক্সের ইতিহাস

টিআইবিঃ আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা আশা করছি সবাই আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছেন। আজ আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত ফরেক্স ট্রেডিং নিয়ে। ফরেক্স বিজনেসের খুঁটি নাটি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক ২০ পর্বে ফরেক্স ট্রেডিং এর A-Z আলোচনা করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিক পর্বগুলোতে ফরেক্স ব্যবসায় কিভাবে অগ্রসর হবেন তার বিস্তারিত বর্ননা দেয়ার চেষ্টা করবো। আমার এ লেখাগুলো বিভিন্ন ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা। কথা না বাড়িয়ে চলুন ৭ম পর্বে।

চতুর্থ খ্রিষ্টাব্দে তো পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের সরকার কারেন্সি এক্সচেঞ্জ এর জন্য একটি প্রতিষ্ঠানই চালু করেছিল। শুধুমাত্র ওই প্রতিষ্ঠানটিই মুদ্রা পরিবর্তন করতে পারত বলে তা সরকারের মনোপলি ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল।
আপনার কৌতূহলী মন হয়ত ইতিমধ্যেই জানতে চাচ্ছে, এত এত বছর আগে মানুষের কি দরকার পড়ত মুদ্রা পরিবর্তনের? আর তখনকার দিনে মুদ্রা পরিবর্তনের রেটই বা কিভাবে নির্ধারিত হত?

তখনকার মানুষও কিন্তু ব্যবসার প্রয়োজনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেত। স্বভাবতই, এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশে আর কাজ করত না। তাই, দেশ ত্যাগের পূর্বে মানুষ স্বর্ণ বা রুপা কিনে নিয়ে তা অন্য দেশে বিক্রি করে ওই দেশের কারেন্সি কিনে নিত। আর এই বিড়ম্বনা দূর করার জন্যই কমিশনের বিনিময়ে কিছু লোক সরাসরি এক দেশের মুদ্রাকে অপর দেশের মুদ্রায় পরিবর্তন করে দিত। আর দর নির্ধারিত স্বর্ণ বা রুপার বিনিময়ে কোন দেশের মুদ্রা কতখানি পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে।

টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ টেকনো ইনফো বিডি এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

এরও ১০০০ হাজার বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত তেমন কোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেনি মুদ্রা পরিবর্তন বাজারে। এর জন্য দরকার ছিল একটি শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার।

ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়নে পৃথিবীতে সবচেয়ে ভূমিকা রেখেছে ইতালিয়রা। ১৪শ শতাব্দীতে ইতালীর বিভিন্ন প্রভাবশালী ধনী পরিবার অনেকগুলো ব্যাংক ওপেন করে। এগুলোর মধ্যে ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় বোধহয় ১৩৯৭ সালে মিদিচি পরিবার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত Medici Bank, যা প্রায় ১০০ বছর টিকে থাকে। এই পরিবারটি কত ধনী ছিল, তা বোঝানোর জন্য একটি বাক্যই যথেষ্ট। একটি নির্দিষ্ট সময় জুড়ে পুরো ইউরোপের সবচেয়ে সম্পদশালী পরিবার ছিল মিদিচি পরিবার।

নিজেদের ব্যবসা এবং টেক্সটাইল মার্চেন্টদের প্রয়োজনে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্রাঞ্চ ওপেন করে ব্যাংকটি। ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুবিধার্থে চালু করে “Nostro” অ্যাকাউন্ট বুক, ইতালীয় ভাষায় Nostro শব্দের অর্থ “আমরা”। এই “Nostro” অ্যাকাউন্ট বুক ব্যবসায়ীদের লোকাল কারেন্সিতে তাদের ব্যালেন্স ও বৈদেশিক ব্যাংকের বৈদেশিক ব্যালেন্স, দুটোই দেখাত, আর সুবিধা দিত কারেন্সি একচেঞ্জ এরও। ফলে, ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিদেশে ব্যাবসা করা আরও সহজ হয়ে উঠে।

১৪৭২ খ্রিষ্টাব্দে আরেকটি বড় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ইতালির তুস্কানীতে। মন্টে দেই পাস্কি দি সিয়েনা নামের এই ব্যাংকটি কিন্তু আজও টিকে আছে। শুধু তাই নয়, এটি বর্তমানে ইতালির তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক এবং টিকে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ব্যাংক।

১৭ ও ১৮ খ্রিস্টাব্দতে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে একটি সক্রিয় ফরেক্স মার্কেট ছিল। ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে তখন বিপুল পরিমানে বৈদেশিক বাণিজ্য হত। এই ফরেক্স মার্কেটে দেশদুটির মার্চেন্ট ও এজেন্টদের মধ্যেই মূলত কারেন্সির আদান প্রধান হত।

পাঠক, আপনি এতক্ষন জেনেছেন ফরেক্স ট্রেডিং এর প্রাচীন যুগের কথা, যেখানে না ছিল ইন্টারনেট, না ছিল ঘরে বসে ট্রেড করার সুবিধা। মূলত ব্যবসায়ীরাই নিজেদের ব্যাবসার প্রয়োজনে ফরেক্স মার্কেট থেকে এক দেশের মুদ্রা পরিবর্তন করে অন্য দেশের মুদ্রা নিতেন। লিকুইডিটি সুবিধা ছিল না, ছিল না যখন তখন ট্রেড করার সুবিধাও। এমনকি এখনকার মত এত দেশের কারেন্সিও একজায়গায় এক্সচেঞ্জ করা যেত না। দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে অস্টদশ শতাব্দী পর্যন্ত যেখানে শামুকের গতিতে ফরেক্স মার্কেটের উন্নয়ন ঘটেছে সেখান থেকে কিভাবে মাত্র দুই শতাব্দি পরে এতটা সহজ হয়ে গিয়েছে ফরেক্স ট্রেড করা?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্থিরতা আনার প্রয়োজন উপলব্ধি করে। তখন ১৯৭১ সালের দিকে ব্রিটন উডস সিস্টেম চালু হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কারেন্সির বদলে স্বর্ণ ব্যবহার করা হয় এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমাতে। কিন্তু তাতে এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমলেও ফেয়ার একচেঞ্জ রেট বের করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। পরে কমপিউটার ও নেটওয়ার্কের উন্নতির ফলে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ট্রেডিং প্লাটফর্ম বানাতে শুরু করে। ১৯৯০ সাল থেকে অনেক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান তাদের ট্রেডিং প্লাটফর্ম হিসেবে ইন্টারনেটকে বেছে নেয়। এরপর থেকেই শুরু ফরেক্সের যাত্রা। ফরেক্সের চর্চা অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছে, কিন্তু আমাদের দেশে তা নতুনই বলা চলে। কারণ, অনেকেই এ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।

চলবে………………………………।

Leave a Reply