বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন বাংলা কিবোর্ড

টেকনো ইনফোঃ আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন বাংলা কিবোর্ড ‘একুশে বাংলা কি বোর্ড’  সম্পর্কে একটি পোস্ট।

বাংলাদেশে বিজ্ঞানীদের একটি দল স্মার্ট মোবাইল ফোনের জন্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি বাংলা কি বোর্ড উদ্ভাবন করেছেন। অ্যাপস ভিত্তিক এই কি বোর্ডের প্রধান ফিচার হচ্ছে- লেখার সময় অসম্পূর্ণ একটি শব্দ অথবা বাক্য আগে থেকেই অনুমান করে শব্দের ও বাক্যের পরবর্তী অংশ হিসেবে সেটিকে সাজেস্ট করা।

এন্ড্রয়েড ফোনের জন্যে ইংরেজিতে এই ফিচারটি অনেক আগে থেকে থাকলেও বাংলায় এটি একেবারেই নতুন। কম্পিউটারে লেখার জন্যে এধরনের কি বোর্ড থাকলেও মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে এটিই প্রথম।

টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কি বোর্ড ব্যবহার করলে মোবাইল ফোনটি নিজেই বুঝে ফেলবে আপনি কী লিখতে যাচ্ছেন। এর ফলে ফোনে কিছু লিখতে গেলে এখন আর পুরোটা লিখতে হবে না। ফলে অনেক দ্রুত বাংলা টাইপ করা যাবে এবং বাংলা লিখতেও লোকেরা আগ্রহী হবেন।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দলটি এক বছর চেষ্টা করে ‘একুশে বাংলা কি বোর্ড’ নামে এই কি বোর্ড উদ্ভাবন করেছে। এটি এখন প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।

এই গবেষণায় বিজ্ঞানীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী। এই কি বোর্ডের ফিচারটি সম্পর্কে তিনি বলেন,

প্রথমত: অন্যান্য কি বোর্ডের মতো এখানেই সহজেই বাংলা লেখা যায়।

দ্বিতীয়ত: এখানে সোয়াইপ করে লেখা যায়। অর্থাৎ স্মার্ট ফোন থেকে আঙ্গুল না তুলে একটা শব্দ লেখা যাবে।

তৃতীয়টি হচ্ছে আগে থেকেই শব্দ অনুমান করা।

“কোনো বাক্য লিখতে গেলে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক কিছু বুঝে ফেলে। যেমন কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনি কেমন আছেন? এই কথাটির উত্তর হতে পারে আমি ভালো আছি বা আমি ভালো নেই। এই কি বোর্ডে এধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যোগ করা হয়েছে যাতে করে সেখানে একটা বা দুটো শব্দ লেখার পরে বাকি শব্দটা কি হতে পারে সেটাও সে নিজে থেকে অনুমান করতে পারে।”

বিজ্ঞানীদের এই দলটি একুশে বাংলা কি বোর্ড উদ্ভাবন করেছেন, এর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে- কেউ যদি লিখেন ‘আমি তোমাকে’ তখন স্মার্টফোনটি একটা অপশন দিতে পারে যে আপনি হয়তো ‘ভালোবাসি’ শব্দটি লিখতে চাইছেন। তখন আর ওটা লিখতে হবে না। বরং একটা ক্লিক করেই পরের শব্দটি বসানো যাবে।

এই একইভাবে লেখা যাবে শব্দও। যেমন যদি ‘আ’ লেখা হয় তখন ফোনটি আপনাকে ‘আম’ ‘আমি’ ‘আমার’ ‘আমাদের’ ইত্যাদি শব্দ সাজেস্ট করতে পারে।

মি. চক্রবর্তী বলেন, “শব্দের একটা অক্ষর লেখার পরে কিম্বা কোনো একটা বাক্যের একটি শব্দ লেখার পরে কি বোর্ডটি সাজেস্ট করবে শব্দটির পরবর্তী অক্ষর কিম্বা বাক্যটির পরবর্তী শব্দ কি হতে পারে।

“যেমন আমি হয়তো ‘আ’ লিখলাম তখন সে আমাকে ‘আমি’ সাজেস্ট করবে। তারপর ‘আমি’ সিলেক্ট করলে ফোনটি হয়তো আমাকে ‘জানি’ (আমি জানি) বা ‘ভালো’ (আমি ভালো) ‘তোমাকে’ (আমি তোমাকে) এসব সাজেস্ট করবে।”

তিনি জানান, একটি অক্ষর দিয়ে বহু শব্দ হতে পারে কিন্তু যে শব্দগুলো বেশি ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোনটি শুধু সেসব শব্দই দেখাবে।”

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সুপরিচিত যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের কাছ থেকে কিছু ফিচার এই একুশে বাংলা কি বোর্ডে যুক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এই কি বোর্ডটিকে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তিনি বলেন, এ কি বোর্ডটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটিকে আরো বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ করার সুযোগ আছে।

“যেমন একটা শিশু। সে যখন কোনো ভাষা শেখে তাকে কিন্তু অনেকের সাহায্য নিতে হয়। একটা বাচ্চা কখনো একা একা ভাষা শিখতে পারে না। আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে সে অনেক কিছু শিখতে পারে। আমাদের এই কি বোর্ডটিও এখন ওই শিশুর পর্যায়ে রয়েছে।”

বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী জানান, ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে, তাদের চাওয়া পাওয়ার ভিত্তিতে এটিকে আরো সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করবেন।

“এই কি বোর্ড যতো বেশি মানুষ ব্যবহার করবে কি বোর্ডটি ততো বেশি স্মার্ট হবে। কি বোর্ড স্মার্ট হওয়া মানে টাইপিং দ্রুত হবে। আর টাইপিং দ্রুত হলে মানুষজন বাংলায় বেশি লিখবে এবং বাংলায় কনটেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।”

Leave a Reply

Back to top button