এই মুহূর্তে আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশে ব্যাংকারদের মত অসহায় মনে হয় আর অন্য কোন সেক্টর বা কেহই নাই। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং সাধারণ গ্রাহকদের আর্থিক সেবা দিতে গিয়ে, অসচেতন গ্রাহকদের উপচে পড়া ভীড়ের কারণে ব্যাংকারগণ সঠিকভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কোন ব্যাংকেই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না!
বড় ব্যাংক গুলোতে পর্যাপ্ত জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও শাখা ব্যবস্থাপকগন সঠিক পদ্ধতিতে রোস্টার করে জনশক্তি কাজে লাগাচ্ছেন না বা লাগাতে পারছেন না। এর ফলে দেখা যাচ্ছে কিছুদিন পর পর ঐ সব বড় ব্যাংকের একটি একটি করে শাখার পুরো জনশক্তি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর স্থানীয় প্রশাসন ঐ শাখা লকডাউন করে দিচ্ছেন। তখন গ্রাহক সেবাই পুরাপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ঐ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকাও ফুটা হয়ে গতি আঁটকে দিচ্ছে এবং ব্যাংকার জনশক্তিও মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছেন।
আর অতি বাণিজ্যিক এবং অব্যবস্থাপনায় ভরপুর ছোট ছোট ব্যাংক গুলোর অবস্থা আরো করুণ এবং অবর্ণনীয়। তারপরও এই বিষয়গুলি দায়িত্বশীল মহল বা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবক মহল কেহই উল্লেখযোগ্য নজরেই আনছেন না অথবা শ্লোগান সরবস্য কিছু নিয়ম বিধি বেঁধে দিলেও তা কার্যকর করার কোন প্রকার কড়াকড়ি আরোপ করছেন না। যার ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দক্ষ ও মেধাবী ব্যাংকার করোনায় আক্রান্ত/পজিটিভ হয়ে মারাও গিয়েছেন এবং পাশাপাশি উপসর্গ নিয়েও মারা যাচ্ছেন।
এমনকি অভিভাবক ব্যাংকেরও বেশ কিছু মেধাবী ব্যাংকার এই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু থেকে রেহাই পান নাই। আর এই মৃত্যুবরণ কারী ব্যাংকারদের পরিবারগুলিও পড়ছে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে। এছাড়া দেশ ও জাতি হারাচ্ছে মেধাবী ও সুদক্ষ ব্যাংকার।
বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬০০ এর অধিক বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে সুস্থ ও জীবিত ব্যাংকারগণ তাদের চোখের সামনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাদের অনেক দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা ব্যাংকারের করুণ মৃত্যু দেখা সত্তেও চরম মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং সাধারণ গ্রাহক সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছেন এবং তাদের পরিবারগুলিও প্রতি মুহূর্তে চরম আতংক নিয়ে দিন পার করছেন। এই বুঝি তার প্রিয়জন অসহায় ব্যাংকার সন্মুখযোদ্ধা বাসায় ফিরছে করোনার বীজ নিয়ে বা উপসর্গ নিয়ে। হয়তোবা সেও যে কোন সময়ই করোনায় মৃত তার অগ্রজ সহযোদ্ধা বা সন্মুখযোদ্ধা ব্যাংকারের কাতারে সামিল হয়ে যাবে।
এখনো সময় আছে সংশ্লিষ্ট সচেতন মহলের উচিত আরো কার্যকর নিয়ম বিধি প্রণয়ন করে অর্থনীতির চাকা চালু রাখার এই সুদক্ষ ও সুশিক্ষিত জনশক্তিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার।
কার্টেসি: মুনির উল আলম ফিরোজ, ব্যাংকার।