পদোন্নতিতে ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক থাকছেই, তবে পদ্ধতির সংস্কার হচ্ছে

ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্ব পাস করতে হবে। দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রকাশের পরপরই ডিপ্লোমা পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এখন এ পরীক্ষার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর পরীক্ষাসহ সামগ্রিক পদ্ধতিতে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন।

গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (আইবিবি) মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালকেরা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও আইবিবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও দেখুন: ব্যাংকারদের ডিপ্লোমা এ মুহূর্তে কতটা জরুরি?

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং ডিপ্লোমার পরিবর্তিত নাম হবে ‘ব্যাংকিং প্রফেশনাল এগজামিনেশন’। শুধু নামে নয়, এ পরীক্ষার পুরো পদ্ধতিও সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এর সিলেবাস আধুনিকায়ন করে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সিলেবাসের আরও পরিবর্তন ও পরিমার্জন হবে, যাতে পেশাগত জ্ঞানের ক্ষেত্রে দেশের ব্যাংকাররা হালনাগাদ বিষয়গুলো জানতে পারেন। এ পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন, খাতাপত্র মূল্যায়ন ও গুণগত মান আরও বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগের সিদ্ধান্তও হয়েছে।

ব্যাংক ডিপ্লোমা পরীক্ষার পদ্ধতিতে সংস্কারের প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে এ পরীক্ষার পাসের নম্বর ৫০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র বলছে, ব্যাংক ডিপ্লোমা পরীক্ষার পদ্ধতিতে সংস্কারের প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে এ পরীক্ষার পাসের নম্বর ৫০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেয়েই পাস করতে হতো। মাঝের একটা সময়ে পাস নম্বর বাড়ানোর ফলে অনেকেই এ পরীক্ষায় পাস করতে হিমশিম খান বলে আলোচনা ওঠে। তবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাগত এ পরীক্ষার দুই পর্ব পাস করার বাধ্যবাধকতার তা অবশ্য বহাল থাকছে। পরীক্ষার হলে নকল প্রতিরোধে কড়াকড়ি ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পেশাগত পরীক্ষার বিকল্প নেই। তাই এখন থেকে ‘ব্যাংকিং প্রফেশনাল এগজামিনেশন’ নামে এ পরীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে যেহেতু নানা কথাবার্তা এসেছে, সে জন্য ওই সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ পরীক্ষার পদ্ধতি, সিলেবাসসহ পুরো ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করা হবে। ব্যাংকারদের গুণগত মান বৃদ্ধির এ পরীক্ষার মান নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না থাকে, সে জন্য কার্যকরের যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানো হবে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৫ শতাংশের কম

এদিকে আইবিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ পরীক্ষায় প্রথম পর্বে সব বিষয়ে পাস করেছেন মাত্র ২ হাজার ১৯২ জন। এ পরীক্ষায় সারা দেশের প্রায় ৪০ হাজার ব্যাংকার অংশ নিয়েছিলেন। অর্থাৎ উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। ঢাকার চারটি এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের ২১টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আইবিবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এটি পৃথকভাবে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব পদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। দুই পর্বের ডিপ্লোমা পরীক্ষার প্রতি পর্বে ছয়টি করে ১২টি বিষয় থাকে।

আরও দেখুন: ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বিতর্কের অবসান হোক

এ–সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিপত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়; যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী (পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎকৌশল), ব্যাংকের প্রচার ও প্রকাশনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মরত কর্মকর্তা ছাড়া সবাইকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার উভয় পর্ব পাস করতে হবে। এ নির্দেশনা আগামী ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।