আবার জনতা ব্যাংকের এমডি হলেন আব্দুছ ছালাম

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচলক পদে ফের নিয়োগ দেয়া হলো ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিতর্কিত আব্দুছ ছালাম আজাদকে। তাকে আবার নিয়োগ দিতেই চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও দুই দিন শূন্য রাখা হয় জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ।
জনতা ব্যাংকে আব্দুছ ছালামকে আবার নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে ছিল আলোচিত বিষয়। অবশেষে রাতে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
নতুন করে আব্দুছ ছালাম আজাদকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনতা ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সন্ধ্যার পরেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন নিয়ে যাওয়া হয় জনতা ব্যাংকে।
টেকনো ইনফো বিডি'র প্রিয় পাঠক: প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চাকরির গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ টেকনো ইনফো বিডি এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। |
গত ৩ ডিসেম্বর তার মেয়াদ শেষ হয়েছিল। তাকেই আবার নিয়োগ দিতে নতুন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়নি কাউকে। ফলে দুই কার্যদিবস শূন্য ছিল জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর জনতা ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। জনতা ব্যাংকেই তার কর্মজীবন শুরু হয়। মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেলে তাকে বদলি করা হয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেই তিনি তদবির করে ফিরে আসেন জনতা ব্যাংকে। সেখান থেকেই ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন।
অনিয়মের সর্বোচ্চ ঋণ তার হাত দিয়েই: জনতা ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হওয়ার সুবাদে তিনি স্থানীয় কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোয় দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় থেকেই তার ঋণ কেলেঙ্কারি প্রকাশ হতে থাকে। তদবিরসহ বড় করপোরেট গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে ধাপে ধাপে ওপরে উঠতে থাকেন। একইসঙ্গে তার অনিয়মের বিষয়গুলোও বাড়তে থাকে। কিন্তু তদন্ত হলেও তিনি তা ধামাচাপা দিয়ে রাখেন।
সর্বশেষ তার হাত দিয়েই জনতা ব্যাংকের সর্বোচ্চ দুটি ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এগুলোর একটি হচ্ছে এনন টেক্স গ্রুপের পাঁচ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম। অন্যটি হচ্ছে ক্রিসেন্ট গ্রুপকে সীমার বাইরে ঋণ দেয়া। বিতরণকৃত ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার ও ভুয়া বিল ক্রয়। পণ্য আমদানির কথা বলে অর্থ বিদেশে গেলেও ফেরত আসেনি।
এনন টেক্সের ঋণ অনুমোদন দিতে প্রতিটি ধাপে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন। তার সময়েই এসব ঋণ প্রস্তাব তৈরি ও অনুমোদন দেয়া হয়। শাখা ব্যবস্থাপক হওয়ায় এর মধ্যে কিছু ঋণের প্রস্তাবক তিনি নিজেই।
এনন টেক্স গ্রুপকে দেয়া ঋণের অনিয়মগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ পরিদর্শন চালায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই পরিদর্শনে উঠে আসে অনিয়মের ঋণ বিতরণে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি।
অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও অধিকতর তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
নিয়ম অনুযায়ী অর্থ পাচার ইস্যু ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা অনুসন্ধান করে দুদক। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, ঘুষ বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করার ঘটনার অনুসন্ধান ও তদন্ত করে থাকে সংস্থাটি।
এছাড়া ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ জালিয়াতিতেও তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আলোচিত ক্রিসেন্ট গ্রুপও পণ্য রপ্তানি না করেও ভুয়া বিল দিয়ে এক হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় জনতা ব্যাংক থেকে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বেরিয়ে আসে। তখন ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় জামানত আছে। কিন্তু সেই জামানতের বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংককে ভুল বোঝানো হয়, যা পরবর্তী সময়ে বেরিয়ে আসে।
এর পরই ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও জনতা ব্যাংকের ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।