অটোফোকাসের খুঁটিনাটি জানুন ক্যামেরা হাতে হয়ে উঠুন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার

টেকনো ইনফোঃ প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টাচ্ছে গ্যাজেট। একইভাবে বদলে যাচ্ছে ক্যামেরাও। অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল, হটশট ফিল্মের ক্যামেরা থেকে হাল আমলের DSLR। যত দিন যাচ্ছে ততই আধুনিক এবং উন্নত হচ্ছে ক্যামেরা। আর তাই দিন দিন বাড়ছে ক্যামেরার ব্যবহার। কয়েকবছর আগেও ফটোগ্রাফি সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু টেকনোলজি যত উন্নত হয়েছে, ততই মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে ক্যামেরা।

ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার পর মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে ক্যামেরা। হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের উন্নতির ফলে ক্যামেরা নিজেই অনেক দৃষ্টিনন্দন ছবি তুলতে পারছে। আর সেই ক্যামেরা থেকে ডিজিটাল ইমেজ সরাসরি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। এখন হারিয়ে গেছে প্রিন্ট ছবির প্রয়োজনীয়তা। ক্যামেরা যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফোনের সঙ্গে। প্রায় সমস্ত ডিজিটাল ক্যামেরাতেই যুক্ত হয়েছে ভিডিও প্রযুক্তি। ফলে মোবাইল ফোন এবং DSLR এর সৌজন্যে ক্যামেরা এখন মানুষের হাতের মুঠোয়।

ফটোগ্রাফির প্রধান বিশেষত্ব হল ফোকাস করা, যার মাধ্যমে একজন ফটোগ্রাফারের ছবি তোলার হাত কতটা ভালো তা বোঝা যায়। তবে এখন যেহেতু ক্যামেরার অনেক ফাংশন অটোমেটিক হয়ে গেছে, তাই যে কেউ চাইলেই তাঁদের সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে পারেন। তাই আজকাল অনেকেই নিজেদের শখ পূরণের জন্য DSLR কিনছে। কিন্তু শুধু তো শখপূরণ করলেই হবে না, ভালো মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে গেলে ক্যামেরার কাজ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার না হলে একটা ক্লিকের ভুলে আপনার সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

তাই ক্যামেরার বেসিক কিছু কাজ কোন অ্যাঙ্গেলে ছবি তুললে ভালো আসবে, কীভাবে কোন ছবি তুলতে হবে সেই সবই আমরা জানাব আপনাদের। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করব ফটোগ্রাফির বিভিন্ন দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরতে যাতে ক্যামেরা হাতে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার।

অটোফোকাসঃ

ক্যামেরা এবং ফটোগ্রাফি নিয়ে আলোচনা করতে বসলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে অটোফোকাস কি?

অটো ফোকাস হল ডিজিটাল ক্যামেরার একটি ফিচার, যা ক্যামেরার লেন্স এর সামনের বস্তুর দূরত্ব বিবেচনা করে লেন্স এর ফোকাস সমন্বয় করে। অটোফোকাস দুই ধরণের হয় প্যাসিভ এবং অ্যাক্টিভ। এখনকার বেশিরভাগ আধুনিক ক্যামেরাতে প্যাসিভ অটোফোকাস ব্যবহার করা হয়।

প্যাসিভ অটোফোকাস ফেজ ডিটেকশন করতে কাজে লাগে। যা মূলত ক্যামেরার ঠিক মাঝখানের সঙ্গে কিনারার আলোর তারতম্য ব্যবহার করে ফোকাস করে থাকে। পাশাপাশি সাবজেক্ট এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের মাঝের ঔজ্জ্বল্য এবং রঙের তারতম্য বা কনট্রাস্ট বুঝে ফোকাস ঠিক করতেও সাহায্য করে অটোফোকাস।

একটি ছবির কনট্রাস্ট তীক্ষ্ণ করতে গেলে ক্যামেরাকে ঠিকমতো অ্যাডজাস্ট করতে হয়। কনট্রাস্ট তীক্ষ্ণ হলে ছবি ফোকাস হয়। কিন্তু আলো যদি কমে আসে তাহলে অটোফোকাস ফ্ল্যাট হয়ে যায়।

আমরা যখন ছবি তোলার জন্য কোন ক্যামেরা হাতে নেই তখন সামনের বস্তুর দূরত্ব জানি না। তাই আমরা ক্যামেরার ফোকাল লেন্স এর দূরত্ব অনুসারে বস্তুকে সামনে রাখতে পারিনা। তখন ছবির তীক্ষ্ণতা নষ্ট হয়। সাধারনত এটা সকল ফিক্সড ফোকাস ক্যামেরার ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু একটি অটো ফোকাস ক্যামেরা বস্তুর দূরত্ব অনুসারে ফোকাল ও লেন্স এর দূরত্ব সমন্বয় করে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যখন আমরা খুব কাছের কোন বস্তুর ছবি তুলি বা কাগজ বা বই থেকে লেখার ছবি তুলি।

যখন আপনি ক্যামেরা হাতে তুলে নেন সেটা সাবজেক্টে ফোকাস করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ ক্যামেরাই নিজে থেকেই অটোফোকাস পয়েন্ট সিলেক্ট করে নেয় যা ফ্রেমের একেবারে মাঝখানে থাকে। তবে মোবাইল ক্যামেরায় অটোফোকাসের ক্ষেত্রে আপনাকে স্ক্রিনের ওপর আঙুল ছোঁয়াতে হয়। এভাবেই অটোফোকাসের বিভিন্ন মোড অ্যাডজাস্ট করে আপনি ক্যামেরায় ছবি তুলতে পারবেন।

সিঙ্গল অটোফোকাস মোডঃ

সিঙ্গল অটোফোকাস মোডকে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন নামকরণ করে থাকে। যেমন ক্যাননের ক্ষেত্রে ওয়ান-শট AF এবং নিকনের ক্ষেত্রে AF-S। যদি আপনি কোন নন-মুভিং সাবজেক্ট ক্লিক করতে চান, তাহলে সিঙ্গল অটোফোকাস মোডের সাহায্য নিতে পারেন। একবার আপনি সাবজেক্ট সিলেক্ট করে নিলে এটি ফোকাস লক করে দেয় এবং অন্য সাবজেক্টকে ইগনোর করে।

কন্টিনিউয়াস অটোফোকাসঃ

কন্টিনিউয়াস অটোফোকাসের নামও কোম্পানি ভেদে পরিবর্তন হয়। ক্যাননের ক্ষেত্রে এটি AI সার্ভো এবং নিকনের ক্ষেত্রে AF-C। অনেক মোশনের মধ্যে থেকে কোন ছবি তুলতে গেলে এই মোডটি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে নিজে থেকেই ফোকাস অ্যাডজাস্ট হয়ে যায় কারণ এটি কোনও সাবজেক্টকে ফ্রেমের মধ্যে ট্র্যাক করতে পারে। সাধারণত কোন স্পোর্টস টুর্নামেন্টের ছবি তুলতে গেলে এই কন্টিনিউয়াস অটোফোকাস মোড ব্যবহার করতে হয়।

হাইব্রিড অটোফোকাসঃ

ক্যানন কোম্পানিতে হাইব্রিড অটোফোকাসের নাম হল AI ফোকাস এবং নিকনের ক্ষেত্রে এর নাম AF-A। এই মোডটি হল সিঙ্গল এবং অটোফোকাস উভয়ের মিশ্রণ। যখন কোন সিন স্থির হয়ে থাকে তখন অটোফোকাস লক হয়ে যায়। যখন সেটি নড়তে থাকে তখন নিজে থেকেই এটি ফোকাস অ্যাডজাস্ট করে নেয়।

আশা করি লেখাটি পড়ে অটো ফোকাসের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দর মূহূর্ত গুলো হয়ে উঠবে আরও প্রানবন্ত ৷

Leave a Reply